You are currently viewing আমরা কেনো হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকব?

আমরা কেনো হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকব?

আমরা কেনো হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকব?

মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন। আম খাস দুই মহলেই তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার ক্লাসে ছাত্ররা হুমড়ি খেয়ে পড়ে, বয়ানে বসলে মুসল্লিদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়। বই-কিতাব হাতে নিলে মাথা নুয়ে আসে শ্রদ্ধায়-ভালবাসায়। কেনো, মাদরাসার স্বাভাবিক পরিবেশে থেকে, সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কীভাবে সাধারণ এই মানুষটিই মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন হয়ে উঠলেন-এসব জানতে সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয়েছিলো নতুন ডাক। আজকের ছাত্র ও তরুণ আলেমদের নিয়ে তার ভাবনা-প্রত্যাশা, সিলেবাস-পাঠদান পদ্ধতি ও বাঙালি আলেমদের ভবিষ্যত ভাবনার মতো মৌলিক বিষয়ও উঠে এসেছে আলোচনায়। আছে আরো কিছু মৌলিক আলোকপাত। ক’দিন আগে দারুণ এক দুপুরে তাঁতীবাজার ইসলামিয়া মাদরাসার অফিসে বরেণ্য এ আলেমের সাথে দীর্ঘসময় কথা হয়। আলোচনার চুম্বকাংশ থাকলো আপনারই জন্য। শাকিল আদনান।

➤ নতুন ডাক : আপনার সফল কর্মজীবন নিয়ে বলুন। বেশ ক’টি দিক নিয়ে একসাথে কাজ করেছেন এবং আমাদের বিবেচনায় আপনি খুবরকম সফলও। সাফল্যের পথে এই যাত্রা কি সচেতন পরিকল্পনা থেকে না কাজ করতে করতে একসময় দেখলেন হয়ে গেছে?
মাও. হেমায়েত উদ্দীন : আমার জীবনের কাজের মধ্যে একটা ছিলো ইমামত। এখন নেই। ইমামত করার ব্যাপারে আমার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না। ঘটনাচক্রে একটি মসজিদের কর্তৃপক্ষ আমাকে অনুরোধ করলে ইমামতে এসে যাই। আর একটা কাজ হলো খেতাবাত খেতাবাত বলতে জুমার বয়ান-ঈদের বয়ান ও অন্যান্য বয়ান-এগুলো আমি পরিকল্পনা মতোই করেছি। ইসলাম যেরকম জামে’, আমি চেষ্টা করেছি ইসলামের এই ব্যাপকতা পরিপূর্ণভাবে মুসল্লিদের সামনে উপস্থাপন করতে। যাতে তারাও বুঝতে পারে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান আছে। তথাকথিত কিচ্ছা-কাহিনী বলে বয়ান শেষ করা বা প্রচলিত ওয়ায়েজরা যা করেন আমি কখনো এটি করিনি। এগুলোই পরে ‘বয়ান ও খুত্বা’ নামে একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমি প্রায় সবগুলো সাইটের বয়ান সন্নিবেশিত করার চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, হয়েছেও। সারাদেশের ইমাম সাহেবরাও এটা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকতাও পরিকল্পনা করেই করেছি। আর লেখালেখিটা সবসময় যে পরিকল্পনা করে লিখেছি তা বলা যাবে না। দুয়েকটি লেখা বিচ্ছন্নভাবেও হয়েছে। তবে লেখালেখির সিংহভাগই আমি করেছি নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা থেকে। সমাজে যে বিষয়টির প্রয়োজন আছে কিন্তু কেউ লেখেনি, আমি সেটি নিয়েই লিখেছি। ভবিষ্যতেও যা লেখার পরিকল্পনা আছে তা এই চিন্তা থেকেই।

➤ নতুন ডাক : ইমামতে আপনার অনাগ্রহের কারণ কী ছিলো?
মাও. হেমায়েত: ইমামতের ব্যাপারে আমি যেটা বুঝতাম যে, এক্ষেত্রে পরাধীনতা বড় বেশি। আর স্বভাবগতভাবে পরাধীনতা আমার কাছে অসহনীয়। তাই ইমামত নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ ছিলো না। তবে মসজিদ কমিটি উদ্যোগী হয়ে প্রস্তাব করলে আমি কিছু শর্তারোপ করি এবং এর সবই তারা মেনে নেয়। ফলে ইমামতিও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তো পরাধীনতা থাকে। বিশেষ করে সময়ের পরাধীনতা। সময় মতো উপস্থিত থাকতে হয়। ইচ্ছেমতো কোনো প্রোগ্রামে যাওয়া যায় না। কাজে জড়ানো যায় না। আমি দীর্ঘদিন ইমামত করেছি প্রায় তেইশ বছর এবং আলহামদুলিল্লাহ, অন্য অনেকের চেয়ে স্বাধীনভাবেই করেছি। তবে দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ায় এই স্বাধীনতাটাকেও পরাধীনতা মনে হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ছি।

➤ নতুন ডাক : আপনি অনেকগুলো বই লিখেছেন। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও সেগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বৈচিত্র্যময়। আপনি কোন অ্যাঙ্গেল বা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বিষয় নির্বাচন করেন?
মাও. হেমায়েত: সমাজে যে বিষয়টির প্রয়োজন আছে আমি সে অ্যাঙ্গেল বা দৃষ্টিকোণ থেকেই লিখি। যেমন আমাদের দেশে- দেশি-বিদেশি অনেক মতবাদ আছে। সবাই বলে এই মতবাদ খারাপ, ওরা ভ্রান্ত। কিন্তু কী কারণে, কেনো- এটা কেউ বলে না। এখান থেকে আমার অনুভবে এলো, এ সম্পর্কে এমন একটি বই হওয়া উচিত যাতে সব ভ্রান্তমতের বিস্তারিত পরিচিতি-বিবরণ থাকবে। পরে দলীলসহ লিখলাম-“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ”।
তাছাড়া ছাত্রজীবনে দু’টো বিষয় লক্ষ্য করেছি। পড়ানোর সময় বিভিন্ন নবী রাসূলের আগমন-জন্মস্থান ইত্যাদি খোলাসা করা হয় না। উস্তাদদের কাছে প্রশ্ন করলে বলে এটা আরব দেশের একটা জায়গার নাম। এর বেশি কিছু বলেন না। কিন্তু বিষয়টি তো স্পষ্ট হওয়া দরকার, কোন কোন গোত্রে আসলেন, এর আগের ও বর্তমান নাম কী, অবস্থান অতীতে কোথায় ছিলো বর্তমানে কোথায় আছে তা চিহ্নিত করা দরকার। অস্পষ্ট থাকবে কেন? তাই এই পরিকল্পনা থেকেই ‘কুরআন ও ইসলামী ইতিহাসের মানচিত্র’ করলাম।
এমনিভাবে ছাত্রজীবনে অনেক কিতাবে নফসিয়্যাতি কথাবার্তা পেয়েছি, উস্তাদরাও তাফসীরের কিতাবাদিতেও বিভিন্ন নফসিয়্যাতি আলোচনা থাকে। নফসিয়্যাত মানে মনোবিজ্ঞান। এটা নফসিয়্যাতি উসূল, এটা নফসিয়্যাতি বিষয়, ইসলামী নফসিয়্যাত ইত্যাদি তাবীর থাকে। তখন আমার মনে জাগলো, ইসলামী নফসিয়্যাতের টুকরো টুকরো বিষয়গুলোকে যদি জুড়ে দেয়া যায় তাহলে তো এটা স্বতন্ত্র একটা শাস্ত্র হতে পারে। জেনারেল সাইকোলজিতে ওরা অনেক অগ্রসর। তারা এটাকে স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে রূপ দিতে পারলে আমরা কেনো পারবো না। ছাত্রজীবন থেকেই এটার ওপর লেখা শুরু করেছি। শেষ করতে প্রায় দশ বছর লেগেছে। এর অর্থ এই না যে দশ বছর শুধু এটাই লিখেছি। সহযোগী কিতাবাদি না পাওয়ায় সময় বেশি লেগেছে।
এরপর ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এটাতো চির বাস্তব, আমরাও প্রায়ই বলি । কিন্তু এমন কোনো বই আমি পাইনি যাতে ইসলামের সবগুলো সাইট আছে। হযরত থানভী রহ. এক জায়গায় বলেছেন ইসলামের বিধানগুলো পাঁচভাগে বিভক্ত। কিছু আকাইদ সম্পর্কিত, কিছু ইবাদত সম্পর্কিত, কিছু মুআমালাত সম্পর্কিত, কিছু মুআশারাত সম্পর্কিত এবং কিছু আখলাকিয়্যাত সম্পর্কিত- এ পাঁচ ধরনের। তো আমি এমন কোনো বই পাইনি যাতে ইসলামের এ পাঁচ ধরনের আলোচনা আছে। যা পড়ে মানুষ বুঝতে পারে ইসলাম আসলেই পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই আমি আহকামে যিন্দেগী লিখেছি।

➤ নতুন ডাক : এখন কী নিয়ে কাজ করছেন বা পরিকল্পনায় আর কী কী আছে?
মাও. হেমায়েত: এখন আমার পরিকল্পনায় আছে ইসলামী ইতিহাস ও ভূগোল। এখানেও আমি একটা শূন্যতা অনুভব করি। যেমন, ইসলামী ইতিহাস নামে যে বইগুলো আছে তার মধ্যে শুধু রাজা-বাদশাহদের ক্ষমতা দখলের লড়াই-শাসন ইত্যাদির আলোচনা আছে। অথচ ইসলামের তালীম তারবিয়্যাত, তাহযীব-তামাদ্দুন, দাওয়াত ও তাবলীগ, তাযকিয়া এগুলো নেই। এগুলোও তো ইতিহাসের অংশ। এগুলোরও আলোচনা হওয়া উচিত সমান গুরুত্ব দিয়ে। এই আঙ্গিকেই আমি কাজ শুরু করেছি। তেমনি ইসলামী ভূগোল। এর উপর তো কোনো বই-ই নেই। ইসলামী মনোবিজ্ঞানের মতো এটাও একটা স্বতন্ত্র শাস্ত্র হতে পারে। আমি চেষ্টা করছি এটাকে স্বতন্ত্র শাস্ত্রে রূপ দিতে- যাতে ইসলামের দৃষ্টিতে সবকিছুর ভৌগলিক পর্যালোচনা সম্ভব হয়। এরপর ভূগোল বুঝতে যেসব তথ্য-উপাত্ত এবং প্রাথমিক ধারণা দরকার তাও যেনো চলে আসে। তো আমি আমার মৌলিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমার লেখালেখির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, যতোটুকু পেরেছি তা আল্লাহর অনুগ্রহ…।

➤ নতুন ডাক : আপনি লেখালেখি ও বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দারুণ একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলেন। অন্য সবার মতো মাদরাসার স্বাভাবিক পরিবেশেই আপনি বড় হয়েছেন, তো আপনার মধ্যে এই সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গিটা কীভাবে তৈরী হলো?..
মাও. হেমায়েত : আসলে লেখকের সচেতনতা বা লেখকের মনে ভাব উদিত হওয়া এটা মিনজানিবিল্লাহ হয়ে থাকে। আল্লাহর পক্ষ থেকে লেখার একেকটা বীজ এসে যায়। এই বীজটাকে রোপন করে, সংরক্ষণ করে, আস্তে আস্তে পরিচর্যা করে বড় করে তুলতে হয়। লেখক তো অসলে জন্ম হয়, তৈরী করা যায় না। লেখকের মনোবৃত্তি বা লেখার একটা ভাব জাগ্রত হওয়া এটাও আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।

➤ নতুন ডাক : মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং মসজিদ সামলেই আপনি এতোগুলো কাজ করছেন। সাধারণত আলেমরা বলে থাকেন, এ দুটো সামলে অন্য কিছু করার কোনো সুযোগ থাকে না । এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী হতে পারে?
মাও. হেমায়েত : দুটো কাজ করতে হবে। একটা হল সময় নষ্ট না করা। সময় নষ্ট না করলে সময়ের অনেক বরকত হয়। আমরা তো অনেক সময় নষ্ট করি। গল্প, আড্ডা, অহেতুক কাজে বসে থাকি। সময় নষ্ট না করলে বরকত পাওয়া যায়। আরেকটা বিষয় হল অর্থনৈতিক ধান্ধা। সার্বক্ষণিক টাকা আয়ের টেনশন। কীভাবে টাকা কামানো যায়। ইমামরা ধান্ধায় থাকে কীভাবে মীলাদ, দোয়া করে টাকা বাড়ানো যায়। অর্থের পেছনে না পড়ে মৌলিক কাজে সময় ব্যয় করা। রিযিক তো আল্লাহর হাতে, তাকদিরে যা আছে তাই আসবে। তবে চেষ্টা তো করতেই হবে। জীবিকার পেছনে চেষ্টাটা সাধারণ রেখে পড়াশোনা, গবেষণা অধ্যয়নে সময় বেশি ব্যয় করা উচিত।

➤ নতুন ডাক : সাধারণ শিক্ষায় দেখা যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে ছাত্ররা কর্মজীবনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মাদরাসা শিক্ষায় এই ধাপ কোনটি বা কোন পর্যায় থেকে বিষয়টিকে সামনে আনা যায়?
মাও. হেমায়েত : আসলে ছাত্রজীবনে কর্মজীবনের কথা বেশি ভাবতে নেই। ছাত্রজীবনে গভীর মনোযোগের সাথে শুধু পড়াশোনা করবে। এটা করেই তো শেষ করা যায় না, কর্মজীবন-আয় ও উপার্জনের কথা ভাববে কখন? ফারেগ হওয়ার পর কর্মজীবন। ছাত্রজীবনের কাজ কেবল যোগ্যতা অর্জন করা। আয়-উপার্জনের জন্য তো মাদরাসা শিক্ষা নয়। এটা এমন শিক্ষাও নয় যা দিয়ে সরকারী চাকরী বা প্রশাসনিক দায়িত্ব পাওয়া যাবে। আর কর্মজীবনে গিয়ে কীভাবে ইলম প্রয়োগ করা যায় সে ফিকির করবে। ওয়াজের মাধ্যমে, দরস-তাদরীসের মাধ্যমে, লেখালেখির মাধ্যমে- যার যেরকম যোগ্যতা আছে। আমাদের মাদরাসাগুলোয় এজন্যই বক্তৃতা অনুষ্ঠান, দেয়ালিকা প্রকাশ এসব করানো হয়। সুতরাং ছাত্রজীবনে কর্মজীবনের চিন্তা মাথায়ই আনা যাবে না। এতে ছাত্রের যোগ্যতা গঠনে প্রতিবন্ধকা সৃষ্টি হয়।

➤ নতুন ডাক : কর্মজীবন বলতে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়ই তো নয়, ওয়ারিসে নবী হিসেবে যে কাজগুলো করতে হবে তার জন্য যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারও তো আছে।
মাও. হেমায়েত: হ্যাঁ, ওয়ারিসে নবী হিসেবে যেগুলো দরকার যেমন বক্তৃতা প্রশিক্ষণ, লেখালেখি প্রশিক্ষণ, মুরব্বিদের মাধ্যমে তাযকিয়াহ-এগুলো তো সব জায়গায় হচ্ছে। এগুলো তো গুরুত্ব দিয়ে করতেই হবে। একসময় মাদরাসাগুলোয় সংকীর্ণতা ছিলো, এখন তো কোনো মাদরাসায় এমন হয় বলে মনে হয় না।

➤ নতুন ডাক : বাড়তি পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক মাদরাসা কঠোরতা আরোপ করে, বাইরের কিছু পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় না।
মাও. হেমায়েত: হ্যাঁ অনেক মাদরাসায় বাধ্যবাধকতা আছে। কারণ, আউট পড়াশোনা, জ্ঞানচর্চার জন্য অবাধে ছেড়ে দিলে আসল পড়াশোনা বাদ দিয়ে যে কোন বই পড়তে থাকে। তাই একে আম করে না। খারেজী পড়াশোনা করতে হবে দরসিয়্যাতকে মজবুত রেখে। তাহলে মাদরাসা বা উস্তাদরা বাধা দেবে না। আমি ছাত্রাবস্থায় হাজারের ওপর সাহিত্যের বই পড়েছি। আমাকে তো উস্তাদরা বাধা দিতেন না। কারণ তারা দেখেছেন ছেলেটি ক্লাসে নম্বরে আউয়াল। পড়াশোনা ঠিক রেখে পড়ছে। একটা ছাত্র যদি উস্তাদের গাইডে চলে তাহলে তো সমস্যা নেই। ছাত্রাবস্থায় দুটো কাজ- পড়াশোনা করা এবং উস্তাদের দিকনির্দেশনা মোতাবেক চলা। উল্টাপাল্টা বই পড়লে চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে এবং মূল পড়া নষ্ট হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মূল পড়া নষ্ট করে তো এক্সট্রা পড়ার অনুমতি দেওয়া যায় না। তাহলে ফরজ ছেড়ে নফল নিয়ে
দৌড়াবে।

➤ নতুন ডাক : আপনার খারেজি মুতালার সূচনা কখন কীভাবে, নিজেই শুরু করেন না। কারো মাধ্যমে?
মাও. হেমায়েত : আমার খারেজি মুতালার সূচনা আমার বন্ধু ও বড় ভাই মাও: মাহমুদুল হাসানের মাধ্যমে, খুলনার। আমি যখন মীযান জামাতে পড়ি, তখন থেকেই লেখালেখি শুরু।

➤ নতুন ডাক : আপনার ছাত্রজীবনের সাফল্য ব্যর্থতার বিষয়ে বলুন….
মাও. হেমায়েত: ছাত্রজীবনে আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি নাই। তাই আলাদাভাবে সাফল্য ব্যর্থতা নির্ণয়ের সুযোগ হয়নি। সাফল্য-ব্যর্থতা সবারই থাকে। তবে আল্লাহর রহমতে যে কাজেই হাত দিয়েছি, সফল হয়েছি।

➤ নতুন ডাক : সময়টার বিষয়ে ক্লিয়ার হতে চাইছিলাম। ছাত্রজীবনের কোন সময়টায় এসে পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষ্যত কাজের জন্য একজন ছাত্র প্রস্তুতি শুরু করতে পারে?
মাও. হেমায়েত : ছাত্রজীবনে কর্ম নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগই নেই। একজন ছাত্র যদি পড়াশোনায় ভালো হয়, তাহলে তার চিন্তার কোনো কারণ নেই। ছাত্রের যোগ্যতাই তার ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে।

➤ নতুন ডাক : কাজ সম্পর্কে কোনো ধারণাই যদি না থাকে তাহলে তো অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হতে পারে…
মাও. হেমায়েত : মানুষ চলতে চলতে শিখবে। চলার পথে কিছু সমস্যা হতেই পারে। তাই চলতে চলতে শিখবে এবং যে লাইনে চলবে সে লাইনে আগে যারা চলেছে বা অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলবে। যে অঙ্গনে আমি চলিনি তার সম্পর্কে বুঝব কী করে? তাই চলতে চলতে শিখবে এবং এ অঙ্গনের যারা মুরব্বী তাদের থেকে মশওয়ারা নিয়ে চলবে। আমি যখন ইমাম হলাম অনেক কিছুই জানতাম না। বড়দের পরামর্শ নিয়ে আস্তে আস্তে ঠেকে ঠেকে শিখেছি। সুতরাং ওটা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় এতো ভাবার কিছু নেই ।

➤ নতুন ডাক : আপনার দীর্ঘ কর্মজীবনে দায়িত্বের চাপ ও ওয়ারাসাতের দায়বোধ কখনো মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে কি?
মাও. হেমায়েত : আমি মাদরাসায় পড়াচ্ছি এটাও তো ওরাসাতে নববীর কাজ। নবুওয়াতের মূল দায়িত্ব হলো চারটি তালীম-তাযকিয়া-তিলাওয়াত ও দাওয়াত কুরআানের দুটো আয়াতে এটা বলা হয়েছে ‘তিনি তাদেরকে কিতার হিকমত শিক্ষা দেন এবং তাদেরকে তাযকিয়া করেন’ অন্য আয়াতে ‘হে রাসূল, আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার কাছে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে দিন….’। ওরাসাতে নবীদেরকে এই চারটি কাজই করতে হবে। এগুলোর মধ্যে আরো অনেক শাখা-প্রশাখা আছে। যারা মাদরাসার দায়িত্বে আছে তারাও ওয়ারাসাতের কাজ করছে, যারা তাবলিগ করছে তারাও। যারা তাযকিয়ার লাইনে তারাও ওয়ারাসাতের কাজে লিপ্ত। তাই দায়িত্ব ও ওরাসাতের দায়বোধের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নেই। তবে এটুকু বলা যায় যে, একজন একটা কাজে লিপ্ত হলে অন্যান্য কাজগুলো তাকে দিয়ে হয় না। এখানে তো ইনসান মুকাল্লাফ। কেউ একটা পারছে, কেউ অন্যটা যার যার সামর্থ্যানুযায়ী।

➤ নতুন ডাক : অনেক সময় অভিযোগ করা হয় যে অন্যগুলোর প্রতি মোটেও খেয়াল থাকে না। যেমন তালীমের কাজে থেকে তাবলীগে সময় দেওয়া যায় না।
মাও. হেমায়েত : একটা হলো কাজ। আর একটা হলো সহযোগিতা। আমি একা সব দায়িত্ব পালন করতে পারব না। তবে যতোটা পারি অন্যদের সহযোগিতা করবো। আহলে হকদের প্রতিটি কাজে পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা থাকতে হবে।

➤ নতুন ডাক : অনেকে তো সুযোগও নিয়ে থাকেন। বসে অলস সময় কাটান আর দাওয়াত-তাবলীগের আহ্বান জানালে বলেন তিনি ইলমি কাজে ব্যস্ত কিংবা এ জাতীয় বিভিন্ন অজুহাত…
মাও. হেমায়েত : আলেমদের সাচেতন হওয়া দরকার। অনেক আলেম দেখা যায়। অনেক ব্যস্ত আবার অনেককে দেখা যায় অলস বসে আছে। এটা আলসেমি হতে পারে, হতে পারে যোগ্যতার অভাব। তবে আলেম হিসেবে আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিৎ।

➤ নতুন ডাক : এমন মানসিকতার লোক আলেম সমাজে প্রচুর। দায়টা কি শুধু ব্যক্তির না সামগ্রিকভাবে সবার, আপনার কি মত?
মাও. হেমায়েত : সামগ্রিকভাবে আলেম সমাজ কাজের প্রতি যত্নবান। আলসেমি বা যোগ্যতার অভাব এটা তো ব্যক্তিগত বিষয়, এর দায় সবার ওপর চাপানো ঠিক হবে না। আমি এক্ষেত্রে সবাইকে শুধু সচেতন হতে বলবো।

➤ নতুন ডাক : আবার ব্যক্তিগত বিষয়ে আসি। আপনি মৌলিক গবেষণার কাজ যেমন করেছেন, কিছু রম্য বা রস রচনার বইও আছে-সমন্বয়টা কী করে সম্ভব হলো?
মাও. হেমায়েত : আমার দুটো রম্য রচনার বই আছে। এগুলাতেও আসলে গবেষণার ছাপ আছে। এটাকে আমি রম্য আকারে পেশ করার চেষ্টা করেছি। আসলে একসময় আমার ভেতরে একটা দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করতো যে- সব বিষয়কেই রস রচনা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। এমনকি ব্যাকরণের মতো জটিল বিষয়কেও। এই বোধ থেকে তৎকালীন পাথেয় পত্রিকায় ভাষা ও ব্যাকরণ নিয়ে লেখাও শুরু করেছিলাম। পত্রকাটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর এগুনো হয়নি। তবে এই চিন্তাটা নিয়ে কাজ করা যায়। তরুণরা উদ্যোগী হলে ভালো করতে পারবে।

➤ নতুন ডাক : আপনার চশমার আয়না যেমন’ বইয়ে প্রেম ও রোমান্টিসিজমের আলোচনা স্থান পেয়েছে। তো ইসলামী গল্প-উপন্যাসে বা সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় প্রেম ও রোমান্টিসিজমের উপস্থিতি ও উপস্থাপনা নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
মাও. হেমায়েত : আসলে প্রেম রোমান্টিসিজমের দু’রকম ব্যাখ্যা আছে। সাধারণত প্রেম বলতে শারিরীক বর্ণনা, সুড়সুড়িমূলক কথাবার্তা এসব বুঝানো হয়। এটা তো সবদিক থেকে ক্ষতিকারক। আলেমদের এসব নিয়ে না এগুনো উচিৎ । তাছাড়া সাহিত্যের ধারা পুরো বদলে গেছে। পরিচিত শব্দ, সহজ ও ছোট বাক্যের গাঁথুনি এবং সাবলীল উপস্থাপনা না হলে আজকাল পাঠকরা গ্রহণ করে না। এমনকি উপন্যাস সাহিত্যও এখন আর আগের মতো নায়ক নায়িকা বা প্রেমনির্ভরতার ওপর থেমে নেই। সাহিত্যের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত হয়েছে। জীবন-জগৎ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাষ্ট্র-সমাজ সব নিয়েই সাহিত্য হচ্ছে। সুতরাং শুধু প্রেমের ভাবনা নিয়ে আমি পড়ে থাকবো কেনো? তবে হ্যাঁ, আরেক অর্থে প্রেম-রোমান্টিসিজম হচ্ছে সাহিত্যের প্রাণ। আদর-সোহাগ, স্নেহ-প্রীতি, আবেগ-অনুভূতি, দুঃখ-কষ্ট এসব ছাড়া তো সাহিত্য হয় না। সুতরাং আলেমদের রচনায় প্রেম থাকবে পজিটিভ অর্থে। তাছাড়া ইসলামী গল্প, ইসলামী উপন্যাস, ইসলামী সংগীত-এসবে ইসলামী শব্দ প্রয়োগের পক্ষপাতি নই আমি। এসবক্ষেত্রে ইসলামী শব্দ ব্যবহার না করা উচৎ। ক’দিন পর হয়তো ইসলামী নাটক, ইসলামী অভিনয় এগুলোও শুনতে হবে। বিষয় ভালো হলে, উপস্থাপনার ধরনে শালীনতা এলে সবরকমের লেখাই ঠিক আছে। আমাদের আকাবিররাও তো গল্প লিখে গেছেন। এখন না হয় আমরা তা এই সময়ের ভাষায়, এই সময়ের ধারায় লিখলাম ।….

➤ নতুন ডাক : জীবনের এ পর্যায়ে এসে ইমামত, খেতাবাত ও শিক্ষকতাসহ সবরকম কাজে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি বা ভালো মন্দ লাগার বিষয়ে যদি কিছু বলেন….
মাও. হেমায়েত : আলহামদুলিল্লাহ, এটা আল্লাহ পাকের খাস রহমত। দীর্ঘ ইমামতের জীবনে মান-সম্মান, আত্মমর্যাদা ঠিক রেখেই চলতে পেরেছি। কারো সামনে মাথানত করতে হয়নি। কারো চেহারা দেখে প্রভাবিত হওয়া বা কাউকে তোয়াক্কা করে চলার প্রয়োজন পড়েনি। আমি পাবলিকের কাছ থেকে কোনোভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করিনি। যে কারণে কেউ কখনো ছোট বা নত ভাবার সুযোগ পায়নি। এবং দাপটের সাথেই আমি দায়িত্ব পালন করে যেতে পেরেছি। অন্যসব ক্ষেত্রেও সন্তোষজনক ও তৃপ্তিদায়ক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই পথ চলতে পেরেছি। এটা আল্লাহ পাকের খাস রহমত ছাড়া সম্ভব নয় ।

➤ নতুন ডাক : মাদরাসায় আয়-রোজগার ভালো না হওয়ায় অনেক তরুণ আলেম বাধ্য হয়ে ইমামতে যান। বাড়তি কিছু আয়ের আশায়। কেউ কেউ মিলাদসহ অন্যান্য মাকরূহাতের কাজেও জড়িয়ে যান…
মাও. হেমায়েত : মসজিদ-মাদরাসার কমিটির লোকেরা এমন কেন হয় জানি না । তারা উলামায়ে কেরামের হক আদায় করে না। আলেম সমাজ অভাবের মধ্যে থাকে। হয়তো আল্লাহ পাকেরও তা-ই মর্জি। ভয়ে-পিছুটানে অনেকে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না। তবে কেউ যদি স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকতে পারে আল্লাহ পাক তার জরুরত পূরণ করে দেবেন। আমি নিজেও মারাত্মক অভাবের মধ্য দিয়ে পথ চলেছি। নাখাল পাড়া মসজিদ থেকে বারিধারা মাদরাসায় যাতায়াত করতে মাত্র দশ টাকা লাগতো। এ দশটাকার অভাবে বহুদিন এমন হয়েছে যে, ক্লাস নিতে পারিনি। তবে কোনো মুসল্লিকে তা বুঝতে দেইনি। আমি তাদের কাছে হাত পাতিনি। কিন্তু আল্লাহ পাক তো পরে আমার অবস্থা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। আসলে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করে চললে আল্লাহ অবশ্যই দেখেন। এটা হাদীসের ভাষ্য। ধৈর্যের সাথে ছিলাম আল্লাহ বরকত দিয়েছেন।

➤ নতুন ডাক : একজন সফল ছাত্রের মাপকাঠি কী, কখন আমরা কাউকে ভালো ও সফল ছাত্র হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি?
মাও. হেমায়েত: একজন সফল ছাত্র সে, যার পড়াশোনা ভালো চরিত্রও ভালো। শুধু পড়াশোনা ভালো হলে চলবে না। কারণ আমাদের এ লাইনে শুধু পড়াশোনা উদ্দেশ্য নয়। চরিত্র গঠন, ব্যক্তিত্ব গঠনও রয়েছে। আর তা সম্ভব হয় যদি কেউ মাদরাসার আইন-কানুন মেনে এবং উস্তাদদের পরামর্শ মতো চলে।

➤ নতুন ডাক : বলা হয় আজকের শিশু আগামি দিনের ভবিষ্যৎ। একদম নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি মন্তব্য করতে বলা হয় যে, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরীর প্রশ্নে আমাদের সিলেবাস ও শিক্ষাপ্রক্রিয়া আসলে কতোটা কার্যকর- কী বলবেন আপনি?
মাও. হেমায়েত : নেতৃত্ব দু‘ ধরনের। একটা হলো ধর্মীয় বিষয়ে নেতৃত্ব। এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যে জ্ঞান-ইলম দরকার মাদরাসা শিক্ষায় তা পর্যাপ্ত পরিমাণেই প্রদান করা হয়। কওমি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন ধর্মীয় সব অঙ্গনে নেতৃত্ব দিতে পারবে। আরেকটা হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া। আমাদের কেউ যদি সে অঙ্গনে নেতৃত্ব দিতে চায় তাহলে ফারেগ হওয়ার পর অভিজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর দিতে পারে। অন্যথায় কঠিন হয়ে যাবে। আর এটা কওমি শিক্ষার কোনো অসম্পূর্ণতা বা সীমাবদ্ধতা নয়। কারণ, সব শিক্ষারই একটা লিমিটেশন আছে।

➤ নতুন ডাক : ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে মাদরাসাগুলোর অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। স্কুল-কলেজ তো সে তুলনায় যথেষ্ট উদার। হুজুরদের এ ভাবনা কতোটা যৌক্তিক?
মাও. হেমায়েত: অনেক মাদরাসায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আমাদের আকাবিরদের অনেকেও বিরোধী ছিলেন। যেমন থানভী রহ.। পড়াশোনা নষ্ট হয়। আর জেনারেল লাইনে যারা রাজনীতিতে জড়িত থাকে তাদের পড়াশোনাও অতো উন্নত নয়। ভালো ছাত্ররা এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। তাছাড়া ওই শিক্ষার উদ্দেশ্যই তো হলো দুনিয়া কামানো। রাজনীতি করলে ভালো টাকা কামানোর সুযোগ হয় তাই তারা করে। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য তো দুনিয়া কামানো না। উদ্দেশ্য হলো, যে পড়াশোনা আমি করছি তার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন করে দ্বীনের খেদমত করা। ছাত্রাবস্থায় আমি তাহলে কীভাবে রাজনীতি করতে পারি?

➤ নতুন ডাক : কিন্তু এটা কতোটা বাস্তব যে জাতীয় পর্যায়ে আলেমদের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করবো অথচ ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি করার সুযোগ দেবো না। তাছাড়া বলাই তো হয়ে থাকে-ছাত্র রাজনীতি থেকেই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরী হয়….
মাও. হেমায়েত : যে ব্যাখ্যা করে কিংবা যে অজুহাত ও যুক্তি দেখিয়েই ছাত্রদের রাজনীতিতে টানা হোক না কেন, পড়াশোনায় ইনহিমাকের ক্ষতি হবেই। সুতরাং না টানাই সবদিক থেকে ভালো ।

➤ নতুন ডাক : কওমি সিলেবাসে পরিবর্তনের বিষয়টি তো আমাদের অঙ্গনে সবসময়েরই আলোচিত একটি টপিক। এ নিয়ে আপনার মতামত বিস্তারিত জানতে চাই।
মাও. হেমায়েত : সিলেবাসে পরিবর্তন একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। যামানার আলোকে পরিবর্তন হওয়া দরকার। এ পরিবর্তন বলতে শুধু বিষয়বস্তুর সংযোজন বা বিয়োজন না, বিষয়বস্তুর সংযোজন বিয়োজনের সাথে সাথে যে শাস্ত্রগুলো আমরা পড়াচ্ছি এ শাস্ত্রের বইগুলো যে ভাষায় লেখা আছে ঐ ভাষার ভেতরেও সহজকরণ সাবলীলতা আনা । এক্ষেত্রেও পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের নেসাবে শরহে আকাইদ পড়ানো হয় তালখিসুল মিফতাহ, মুখতাসারুল মাআনী, বালাগাত পড়ানো হয় এগুলোর ইবারত এতো জটিল, উপস্থাপনা এতো জটিল যে এগুলো বুঝতেই ছেলেদের মেধা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। বিষয়টা সে মস্তিষ্কে বসাতে পারে না। তো কিতাবগুলোতে ভাষার সাবলীলতা আনা দরকার। তাসহীল করা দরকার। তবে যে পরিবর্তনই হোক সে পরিবর্তনটা সমন্বিত উদ্যোগে হওয়া চাই। এখন দেখা যাচ্ছে প্রয়োজন অনুভব করে একেকজন একেকভাবে পরিবর্তন আনছে। কেউ ভাড়াবাসায় কেউ অভাড়া বাসায় মাদরাসা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন আনছে। এতে করে তো আমাদের চিন্তাধারার যে ঐক্য ছিলো সে ঐক্যটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উলামায়ে দেওবন্দ সব একটা চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত। যেরকম নেসাবে ছাত্র বেড়ে ওঠবে ঐ নেসাবের প্রভাব অবশ্যই তার মাথায় পড়বে। এখন শতটা মাদরাসা হচ্ছে আর শতটা নেবাস গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে আমাদের চিন্তাধারার ঐক্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর আরেকটা সমস্যা হলো এক প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ে আরেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার যোগ্যতা তার হবে না। একেক জায়গার নেসাব একক রকম। নেসাবের সংযোজন-বিয়োজন হোক, কিতাবগুলোর তাবিরাত- তাসহিলাত সব আমাদের সমন্বিত উদ্যোগেই হওয়া চাই। যেমন বেফাক আমাদের একটা সমন্বিত প্লাটফর্ম। এর মাধ্যমে হতে পারে। বা সারাদেশের উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটা স্ট্যান্ডিং কমিটি হতে পারে। সুতরাং যেভাবেই হোক বিচ্ছিন্নভাবে যেনো না হয়।

➤ নতুন ডাক : বেফাকের পক্ষ থেকেও তো দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে কিন্তু ফলাফল শূন্য…
মাও. হেমায়েত : বেফাকের মাধ্যমে হুট করে পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। খুব ধীরে ধীরে হচ্ছে। কারণ আমাদের উলামাদের সবার চিন্তাকে একত্রিত করা যাচ্ছে না। আমাদের একেকজনের চিন্তা একেকরকম। এজন্য হুট করে করা সম্ভব হচ্ছে না।

➤ নতুন ডাক : ছাত্রদের ক্লাসের বাইরের অধ্যয়ন-কীভাবে, কী লক্ষ্যে হওয়া উচিৎ?
মাও. হেমায়েত: ছাত্রদের সব খারেজী মুতালা ওস্তাদদের রাহনুমায়ী অনুযায়ী হলে ভালো হয়। যদি কোনো ছাত্র সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হয় তাহলে ওস্তাদদের গাইড ছাড়াও নিজে নিজে সে খারেজী মুতালা করতে পারে। তবে গাইড মেনে করলেই ভাল। আর মুতালার বিষয়ে ছাত্রদের একটা জিনিস মনে রাখা উচিৎ। এক্ষেত্রে তিন ধরনের বিষয় নির্বাচন করা যায়। একটা হলো আমার দরসি বিষয়াদিকে ভালো করে বুঝার জন্য সহায়ক গ্রন্থ। যেমন আমি কুরআন তরজমায় আসহাবে কাহাফের ঘটনা পড়ছি, যুল কারনাইনের ঘটনা পড়ছি, কওমি আদ-ছামুদের ঘটনা পড়ছি এগুলো সম্পর্কে যে সব রেসালা বই-পুস্তক আছে তা পড়লাম। তাহলে বিষয়টি আরো ভালো করে বুঝতে সহায়ক হবে। এই এক ধরনের মুতালা হবে। আরেকটা মুতালা হবে আমাদের আকাবিরগণের জীবনী, এটা জীবন চলার পথে উৎসাহ যোগায় এবং জীবন চলতে দিকনির্দেশনা দেয়। তারা কীভাবে বড় হয়েছেন, তারা কীভাবে পড়াশোনা করেছেন। এটা ছাত্রদের জীবন গড়ার সহায়ক হয়। আরেকটা হলো ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক। ভাষা-সাহিত্য বিষয়ক মুতালা খুব নাজুক বিষয় । কারণ এমন সব নভেল নাটকে চারপাশ ভরে আছে, যা সবদিক বিবেচনায়ই খারাপ ও ক্ষতিকর। তো এগুলোর ক্ষেত্রে দক্ষ উস্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, তাদের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী মুতালা করা। আমি ভাষা-সাহিত্য শিখতে আগ্রহী আমার ছাত্র ভাইদের জন্য একটা সিলেবাস করেছি। এটা আমি আমার সমমনা লেখকদের সাথে মতবিনিময় করেই করেছি। সাহিত্য বিষয়ক সিলেবাস । বইয়ের নাম-তালিকা প্রাপ্তিস্থানও দিয়ে দিয়েছি, ছাত্ররা সেটার সহযোগিতা নিতে পারে।

➤ নতুন ডাক : ঢাকাসহ সারাদেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে ছাত্রদের কোনোরকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় না। ফলে কর্মজীবনে গিয়ে তারা নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হয়…
মাও. হেমায়েত: ছাত্রদের একাডেমিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সংকীর্ণতা না দেখানো উচিৎ। একটা হলো একাডেমিক প্রশিক্ষণ আরেকটা হলো প্রতিযোগিতামূলক প্রশিক্ষণ। প্রতিযোগিতামূলক প্রশিক্ষণের ভালো দিক আছে, ক্ষতির দিকও আছে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছাত্ররা উৎসাহী হয়। এটা ইতিবাচক দিক। নেতিবাচক দিকও আছে। সেটা হলো পুরস্কারের বড় কিছু পেয়ে বা অনেক টাকা পেয়ে ব্যবসায় লাগালো বা অন্যকোনো ধান্ধায় পড়ে যায়। আবার অহমিকা চলে আসে যে আমি তো অনেক বড় কিছু হয়ে গেছি। যেটা ক্ষতির কারণ। তাই প্রতিযোগিতার বিষয়টাও এমনভাবে করা চাই যেন ছাত্ররা অতি উঁচু মানসিকতার শিকার না হয়ে পড়ে। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক দিক, এর প্রতি লক্ষ্য রাখা চাই।

➤ নতুন ডাক : ছাত্রদের মনোযোগ, যোগ্যতা, চলাফেরা এসবে আপনার দৃষ্টিতে কতোটা পরিবর্তন দেখছেন, ভালো-মন্দের দিকগুলো যদি বলেন….
মাও. হেমায়েত: ছাত্রদের মধ্যে তো অনেক পরিবর্তন এসেছে আগের থেকে। কিছু পরিবর্তন ভালো, কিছু আবার খারাপও। ছাত্রদের সংখ্যা বেড়েছে, যোগ্যতা বাড়েনি। কামমিয়্যাত বেড়েছে কাইফিয়্যাত বাড়েনি। এটা একটা বিষয়। ছাত্রদের মন মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল। মোবাইলে এমন কিছু আছে যা দেখলে ছাত্রদের মন মানসিকতা বিগড়ে যাবে। পড়ালেখারও ক্ষতি হয়। প্রতিটি মাদরাসায় মোবাইল বন্ধ করতে না পারলেও মেমোরী কার্ডের সিস্টেম বন্ধ করা দরকার। এর কারণেই সব অবক্ষয়। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

➤ নতুন ডাক : উস্তাদ-ছাত্রের আন্তরিকতা ও সুসম্পর্কের বিষয়টিও আজকাল আলোচনায় উঠে আসছে। বাস্তবে এর প্রভাব কতোটুকু?
মাও. হেমায়েত : প্রভাব নিয়ে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। উস্তাদ যদি পড়ানোর ব্যাপারে মনোযোগী না হন তাহলে ছেলেরাও মনোযোগী হবে না। উস্তাদ যদি বা-আখলাক না হন তাহলে ছেলেরাও বা-আখলাক হবে না। ছাত্ররা শুধু কিতাব মুতালা করে না। ছাত্ররা উস্তাদও মুতালা করে। কিতাব বিনীর সাথে সাথে উস্তাদ বিনীও করে। ছাত্রকে মুতালায় আগ্রহী করতে হলে উস্তাদকেও মুতালা করতে হবে। ছাত্র যদি দেখে যে আমার উস্তাদ সারাক্ষণ কিতাব নিয়ে পড়ে থাকে, এটা ছাত্রের মাঝে প্রভাব ফেলে।

➤ নতুন ডাক : ছাত্রদের চলমান অবস্থানে পরিবর্তন আনার জন্য আর কোন বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ?
মাও. হেমায়েত: ছাত্রদেরকে যোগ্য-দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য তালীমের তরীকাটাও পরিবর্তন হওয়া দরকার। যেমন যারা বাংলা পড়ান তারা সাধারণত বাংলা শব্দের অর্থ বলে ব্যাখ্যা থাকলে বলে চলে যান। আমি বলি, যেখানে যে গ্রামার পড়ানো হয়েছে, ব্যাকরণ পড়ানো হয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ করে পড়ানো এবং প্রয়োগ করতে শেখানো। যেমন একটা শব্দ যখন আপনি পড়াবেন তো প্রথমে শব্দের উচ্চারণ ঠিক করতে হবে। উচ্চারণে ভুল আছে কি না তা সংশোধন করতে হবে। আগে শব্দের উচ্চারণ শেখা কঠিন ছিল । তখন মুরব্বীরা বলতেন ভালো উচ্চারণ শিখতে হলে যারা রেডিও টেলিভিশনে খবর পাঠ করে তা খেয়াল করা। এখন তো বাংলা একাডেমী থেকে উচ্চারণ অভিধান বের হয়েছে। এরপর শব্দটা কীভাবে গঠিত হল, কয়টা অংশ নিয়ে গঠিত হল তা বিশ্লেষণ করে পড়ানো । বাংলা শব্দের শুরুতে উপসর্গ থাকে, এরপর শব্দের ধাতু বা ক্রিয়ামূল থাকে, এরপর কতটুকু উপসর্গ, কতোটুকু ক্রিয়ামূল, এই ক্রিয়ামূলের সংঙ্গে কতোটুকু প্রত্যয় যোগ হয়েছে, ভিন্ন শব্দ যোগ হয়েছে। আবার এই প্রত্যয়ের ভেতরে বিভক্তি কী এসেছে এই সবগুলোকে বুঝিয়ে তারপরে শব্দটার অর্থ বলেন তাহলে ছেলেরা দক্ষতার সঙ্গে বুঝতে পারবে। এভাবে শব্দ বিশ্লেষণ করে পড়ান। যারা আরবী পড়ান এভাবে পড়ালে ছাত্র দক্ষতার সঙ্গে শব্দের অর্থ ব্যুৎপত্তির সঙ্গে অর্জন করতে পারবে। তো সে যে ব্যাকরণ পড়ল এই ব্যাকরণ প্রয়োগ করা সে শিখল। অন্যথায় ব্যাকরণের জায়গায় ব্যাকরণ থেকে যাবে, বইয়ের জায়গায় বই দুটোর সমন্বয় কোনোদিন ঘটবে না। যারা মাদরাসায় আরবী পড়ান তাদেরকে বলি যে, আপনি ফেকাহ এর কিতাব পড়াচ্ছেন- ছাত্র যে উসূলে ফেকাহ পড়ল এই উসূলে ফিকহকে প্রয়োগ করতে শেখান। ফেকাহর কোন্ উসূলের ভিত্তিতে এই মাসায়েলটা ইসতিমবাত হয়েছে. উসূলে ফিকাহটা এখানে প্রয়োগ করে শেখান। তাহলে ছাত্র শুধু মাসলা শিখবে না। সে ফকীহ হতে পারবে। ইফতা পড়েও আজকাল ফকীহ হয় না। মাসলা বলতে পারে। মাসলা তো ইফতা না পড়েও পারা যায়। তাহলে ইফতা পড়ার স্বার্থকতা কোথায়? ইফতা পড়ছে, ফেকাহর বড় বড় কিতাব হেদায়ার মত উচ্চাঙ্গের কিতাব পড়ছে কিন্তু ফকীহ হতে পারছে না। কিভাবে মাসাইলগুলো ইসতেমাত করা হয়েছে, কোন কোন উসুলের ভিত্তিতে হয়েছে তা ছেলেদেরকে বুঝানো হচ্ছে না। এভাবে যতগুলো সহযোগী শাস্ত্র আমরা পড়াই, বালাগাত পড়াই- তো আমি কুরআন শরীফ পড়ার সময় শব্দে শব্দে যদি ধরিয়ে দিই যে, এই শব্দে বালাগাত এর এই কায়েদা আছে তাহলে বালাগাত পড়ার স্বার্থকতা হলো । বালাগাত তো উদ্ভাবিতই হয়েছিলো এজন্য যে, এতে করে কুরআনের এযাজ বোঝা যাবে। এবং যখন আমরা পড়াব বাক্যে বাক্যে পড়াব না, হরফে হরফে পড়াব। মানে একটা বাক্যের যখন তরজমা করব তো তাকে বাক্যে বাক্যে তরজমা শেখাবো না। বাক্যে বাক্যে তরজমা তো সব জায়গায় লেখা আছে। আমি পড়াব বিসমিল্লাহির সাহমানির রাহীম। বিসমিল্লাহ-এর বা কোন অর্থে আসছে আর রহমানির রাহিম উভয়টি মুবালাগার সীগাহ। দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি? আমার অনুবাদের মধ্যে সে পার্থক্যটা ফুটে উঠেছে কি না এইভাবে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া। এভাবে পড়ালে এবং সহযোগী শাস্ত্রগুলো হাতে কলমে ধরিয়ে পড়ালে ছেলেরা যোগ্য হবে।

➤ নতুন ডাক : তরুণ অনেক আলেম বর্তমানে ব্যবসায় ও মিডিয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
মাও. হেমায়েত : আসলে চালেঞ্জ প্রতিবন্ধকতা সবক্ষেত্রেই আছে। ব্যবসায়ও আছে। হালাল হারামের বিষয়টাই এক্ষেত্রে মুখ্য। শিল্প বা বড় খাত হলে অনেকক্ষেত্রে সৎ থাকা সম্ভব হয় না। তারপরও চেষ্টা করলে ছোট খাটো ব্যবসা দিয়েও তো সামনে আগানো যায়।
মিডিয়ার অঙ্গনেও সীমাবদ্ধতা আছে। মিডিয়া বলতে যেমন প্রিন্ট মিডিয়ায় সমস্যা কম। ছবি ছাপার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার না। তবে যতোদিন ছবিকে হালাল বলা না হলো ততোদিন পত্রিকা ছাপা যাবে না, এমন তো নয়। ছবি ছাড়াই চলতে থাকুক। পাকিস্তানে রোজনামা ইসলাম আছে, সম্পূর্ণ ছবিহীন। প্রচুর চলেও। আমরা কেনো পারবো না?.. হ্যাঁ, আরেকটা বিষয় হলো ছবি ছাড়া বিজ্ঞাপন পাওয়া কঠিন। আমরা ধর্মপ্রাণ বিত্তশালীদের সাহায্য নিতে পারি। মাদরাসাগুলোর পেছনে কোটি-কোটি টাকা খরচ করা গেলে মিডিয়ার জন্য কেনো করা যাবে না। সেটারও তো দরকার আছে। দীনের জন্যই তো এটা করা হচ্ছে। আমাদের কিছু ছেলে ভালো কাজ করছে, তাদের নিয়ে আমরা আশাবাদী হতে পারি। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অবস্থান তৈরী করা কঠিন। ওখানে গেলে বিভ্রান্তির শঙ্কাটা বড় বেশি। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে পথচলা উচিৎ। তবে এখানে এমন কিছু প্রত্যয়ী তরুণ দরকার যারা আলেমদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন-শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার বিবেচনায় …..

➤ নতুন ডাক : আজকের আলোয় মাদরাসা শিক্ষার সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত ভাবনা কী?
মাও. হেমায়েত: প্রত্যেক বিদ্যারই নিজস্ব গণ্ডি আছে। এর ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে। পাওয়ার হাউস থেকে বিদ্যুৎ তৈরী হয় অন্য কিছু তৈরী হয় না। কাগজ তৈরী করা তাদের কাজ নয়। এ নিয়ে তারা হতাশ হয় না, ভাবেও না। কারণ, তার গণ্ডি হচ্ছে বিদ্যুৎ পর্যন্ত। আমাদের অঙ্গন আলাদা, আমার যা কাজ সেটা আমি পারছি কি না তাই হচ্ছে দেখার বিষয়। কাজেই অন্যগুলো নিয়ে আমার ভাবার দরকার নেই, হতাশারও কিছু নেই।

➤ নতুন ডাক : সবশেষে বাঙালী আলেমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার আশাবাদ ও হতাশার কথা যদি বলতেন…
মাও. হেমায়েত : বাঙালি শব্দটা যখন এসে গেলো, তখন তো বলতে হয় যে এখানে নিজস্বতা ও স্বকীয়তার একটা ব্যাপার আছে। আমরা স্বকীয়তা নিয়ে গড়ে উঠছি না। বিশেষ করে ওলামায়ে কেরাম। আমাদের মধ্যে হিন্দুস্তানী-পাকিস্তানী প্রভাব ব্যাপক। লেখকদের মধ্যেও এই প্রবণতা প্রবল। আমাদের সাফল্য আছে, স্বকীয়তা আছে। তাদের থেকে তো আমাদের মেধা কম নয়। আমরা দেওবন্দে দেখেছি, বাঙালি ছেলেরাই এগিয়ে। পাকিস্তানেও বাঙালিরা অগ্রসর। তো কেন আমরা তাদের বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইব? এই যে অনুবাদ নির্ভরতা ঠিক নয়। সৃষ্টিশীল স্বকীয় লেখা গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে। একসময় তো দেখা যেতো আমাদের কোনো লেখকই নেই। একদিকে সদর সাহেব, অন্যদিকে সম্পাদক মুহিউদ্দীন খান। আর কেউ ছিলো না। এরপর গত তিন দশকে অনেক লেখক তৈরী হয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো বেশিরভাগই অনুবাদনির্ভর বা অনুকরণপ্রিয়। স্বকীয় চিন্তা থেকে কাজ করার লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে তবে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। পরিবর্তন আসছে। তরুণদের মধ্যে ইফসুফ নদভী, নাসীম আরাফাত ভাল কাজ করছেন। নতুন আঙ্গিকে মৌলিক কাজ শুরু করেছেন মাওলানা মালেক। তো আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন হলে বাঙালির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল । যা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।

➤নতুন ডাক : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ…
মাও. হেমায়েত: ধন্যবাদ তোমাকেও।

Leave a Reply