লেখা : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد :
বুদ্ধিজীবীদের কাছে আর একটি কথা যা নিবেদন করতে চাই তা হল আপনারা ইনসাফের সাথে ভেবে দেখুন তো-
উলামায়ে কেরাম ও ধর্মানুরাগী মুসলমানরা কি আসলেই জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী?
বুদ্ধিজীবীগণ ২০০০ সালের কিছু আগ থেকে খুব জোরালোভাবে শুরু করে সতরো আঠারো বছর যাবত উলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিশেষত কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক ও উলামায়ে কেরামকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বলে খারাপভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে আসছেন। অবশ্য ২০১৬ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান সাহেব ও পুলিশের আইজি জনাব বেনজির আহমদ সাহেব যখন স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, আমরা তদন্তপূর্বক জেনেছি কওমী মাদ্রাসায় কোন জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী নেই এবং বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাদের এ বক্তব্য প্রকাশিতও হয়, তখন থেকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বলার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
মূলত আমেরিকা ও তার দোসররা যখন আফ-গা-নি-স্তান আক্রমণ করে, তখন তা-লে-বা-ন কে সন্ত্রাসী এবং তাদের আক্রমণকে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান আখ্যায়িত করে আক্রমণের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চালায়। আর তাদের সুরে সুর মিলিয়ে অনেকে তেমনই বলে যেতে থাকে। এই সুর মেলানোর পেছনে কোন সত্যনিষ্ঠা কাজ করছিল না। বরং এর পেছনে ছিল বিশ্ব মোড়লদের খুশি রাখার চিন্তা, আবার তাদের বিরোধিতা করার মত সৎসাহসেরও অভাব।
বাস্তবতা হল আলেম সমাজকে কেউ কেউ না বুঝে হুজুগে, আবার কেউ কেউ ভিন্ন কোন হীন স্বার্থে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বললেও মনে প্রাণে কেউই তাদেরকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী মনে করে না। এমনকি যারা আলেমদেরকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বলে বলে মুখে ফেনা তোলে তারাও না। তার হাতে কলমে প্রমাণ হল আলেমদেরকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বলা ঐ লোকদেরও কেউ যদি পথেঘাটে কোথাও প্রকৃত সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রান্ত হয় আর সেখানে আশেপাশে একস্থানে কিছু আলেম দ্বীনদার লোককে জড় দেখে আর একস্থানে কিছু গর-আলেম বদ-দ্বীন লোককে জড় দেখে তাহলে হলফ করে বলা যায় তারা তখন নিরাপত্তা লাভ করার জন্য ঐ আলেম দ্বীনদার লোকদের কাছেই ছুটে যাবে। কারণ সকলের মন আলেম দ্বীনদার লোকদেরকেই নিরীহ, নিরাপদ ও আস্থাভাজন বলে বিশ্বাস করে। তাহলে-
আশ্চর্যের নয় কি যে, এমন সর্বজন স্বীকৃত নিরাপত্তার প্রতীক নিরীহ আলেম সমাজকে বলা হয় জ-ঙ্গী-সন্ত্রাসী। যারা এমনটা বলে তারা কি বিবেককে একবারও জিজ্ঞেস করে দেখেছে?
আশ্চর্যের নয় কি, যে আলেম সমাজ মসজিদ মাদ্রাসা নিয়ে পড়ে থাকেন, যেসব মসজিদ মাদ্রাসায় বিশ পঞ্চাশ একশত বছরে কোন অস্ত্রযুদ্ধ তো নয়ই একটা পটকা পর্যন্ত ফোটেনি, সেই আলেম সমাজকে বলা হয় জ-ঙ্গী-সন্ত্রাসী আর সেসব মাদ্রাসাকে বলা হয় জ-ঙ্গীদের আস্তানা, সন্ত্রাসের আখড়া! যারা এমনটা বলে তারা কি বিবেককে একবারও জিজ্ঞেস করে দেখেছে?
আশ্চর্যের নয় কি, যে আলেম সমাজের অনেকে এমন আছেন যারা জীবনে একটা পিস্তল পটকাও ছুয়ে দেখেননি, অসৎ উদ্দেশ্যে অস্ত্র চালনার কোন মহড়াও দেননি, তাদেরকে বলা হয় জ-ঙ্গী-সন্ত্রাসী! যারা এমনটা বলে তারা কি বিবেককে একবারও জিজ্ঞেস করে দেখেছে?
আশ্চর্যের নয় কি, যে আলেম সমাজের নামে দেশের কোনো থানা আদালতে একটা ছিনতাই ডাকাতি রাহজানি খুন-খারাবির মামলা খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেই আলেম সমাজকে বলা হয় জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী! যারা এমনটা বলে তারা কি বিবেককে একবারও জিজ্ঞেস করে দেখেছে?
আশ্চর্যের নয় কি, এ পর্যন্ত সারা দেশে এক সাথে সিরিজ বোমা ফাঁটানো ও হলি আর্টিজানে আক্রমণসহ যত জ-ঙ্গীপনা ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটল, তার একটাতেও কওমী মাদ্রাসার আলেম উলামার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেল না, বরং তদন্ত-প্রমাণে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হল। তারপরও কওমী মাদ্রাসার আলেম উলামাকে জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী বলা হয়! যারা এমনটা বলে তারা কি বিবেককে একবারও জিজ্ঞেস করে দেখবে না?
এই সকলকে আল্লাহর রসূলের একটি বাণী স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
استفت قلبك. (رواه أحمد في مسنده برقم ١٨٠٣٥ وقال النووي في الأذكار: حديث حسن.)
অর্থাৎ, তুমি তোমার মনকে (তথা বিবেককে) জিজ্ঞেস করে দেখ। (মুসনাদে আহমদ: হাদীছ নং ১৮০৩৫)
যারা মুসলিম বিদ্বেষী আমেরিকা ও তার দোসরদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আলেম সমাজ ও ধর্মানুরাগী মুসলমানদের জ-ঙ্গী সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে, তাদের ভেবে দেখা উচিত- কার সঙ্গে তারা সুর মেলাচ্ছে।
এ তো সেই আমেরিকা, টুইন টাওয়ার ভাঙ্গার অপ্রমাণিত অভিযোগ তুলে যে আফ-গানি-স্তান আক্রমণ করেছে, দখল করেছে, লাখো লাখো মুসলমানকে হত্যা করেছে, তাদের দেশকে ম্যাসাখার করে দিয়েছে। আর তাদের বিরুদ্ধে দেশ রক্ষার জন্য যারা সংগ্রামে নেমেছে সেই সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা তা-লে-বা-ন-কে তারা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করেছে।
এ তো সেই আমেরিকা যে বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগ তুলে ই-রা-ক আক্রমণ করেছে, লক্ষ লক্ষ মুসলমান কে হত্যা করেছে, অমানবিক নির্যাতন করেছে। ই রা ক কে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। আর তাদের বিরুদ্ধে যে মুসলমানরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করেছে। অথচ পরবর্তীতে সেই আমেরিকাই স্বীকার করে নিয়েছে যে, তাদেরই তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ইরাকের কাছে সেরকম বিধ্বংসী অস্ত্র ছিল না। তাহলে তারা ই-রা-ক কে ক্ষতিপূরণ কেন দিল না কিংবা ন্যূনতম তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করল না।
এ তো সেই আমেরিকা যে ফি-লি-স্তি-নের নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে হত্যাকারী, ফি-লি-স্তি-নের মুসলমানদেরকে তাদের বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদকারী ইসরাঈলী সেনাদেরকে প্রকাশ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে, আর সেই ইসরাঈলী সেনাদের মোকাবেলা করার জন্য যে অসহায় ফিলিস্তিনীরা ইট পাথর ছুড়ে মারছে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করছে।
এ তো সেই আমেরিকা যে লিবিয়া সিরিয়াসহ আরও অনেক মুসলিম দেশে বিনা কারণে নাক গলিয়ে প্রবেশ করেছে আর মুসলমানদের হত্যা করে নিজে সন্ত্রাসী তা প্রমাণ করেছে। অথচ উল্টো মুসলমানের উপর সন্ত্রাসের দায় চাপাচ্ছে।
সকলের উচিত বিবেক দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করা। বিশেষত মুসলমানদের মুসলমান হিসেবে ইসলামী চেতনা দিয়েও বিষয়গুলো ভেবে দেখা উচিত। সকলকে আবারও রসূলের বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- “তুমি তোমার মনকে (তথা বিবেককে) জিজ্ঞেস করে দেখ।”