লেখা : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد:
বুদ্ধিজীবীদের কাছে আর একটি কথা যা নিবেদন করতে চাই তা হল-
নারীদের বিধি-বিধান কী হওয়া চাই তা চিন্তা করুন মাথায় কোনরূপ যৌনচেতনার চাপ না রেখে
নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ইসলামী বিধান নিয়ে বুদ্ধিজীবীগণ ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। ইসলাম প্রদত্ত নারীদের পর্দা তথা হিজাবের বিধান, পরপুরুষের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা না করার বিধান, নারীদের স্বামী-বশীভূত হয়ে থাকার বিধান- এ জাতীয় বিধানাবলীকে বুদ্ধিজীবীগণ মেনে নিতে পারেন না। তারা এসব ইসলামী বিধানকে নারী প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার পরিপন্থী আখ্যায়িত করে থাকেন।
নারী প্রগতি ও নারী স্বাধীনতা প্রসঙ্গে পরে এক সংখ্যায় কুরআন হাদীছের আলোকে কিছু বক্তব্য পেশ করব ইনশা আল্লাহ। আজকের সংখ্যায় বুদ্ধিজীবীদের কাছে শুধু এই নিবেদন যে, আপনারা নারীদের পর্দা তথা হিজাবের বিধান, পরপুরুষের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা না করার বিধান, নারীদের স্বামী-বশীভূত হয়ে থাকার বিধান- এই বিধানাবলির উপযোগিতা নিয়ে বিবেচনা করে দেখুন মাথায় কোনরূপ যৌন চেতনার চাপ না রেখে। কারণ আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারব না যে, মাথায় যখন যৌন চেতনার চাপ থাকে তখন কোন নীতি নৈতিকতার কথাই মাথায় একটিভ হয় না। তখন শুধু একটা চিন্তাই মাথায় কাজ করে কীভাবে যৌনখাহেশ পূর্ণ করার পথ খোলাসা করা যায়। তখন মনের মধ্যে সিঞ্চিত খাহেশাত (প্রবৃত্তির চাহিদা) ছাড়া অন্য কোন ভাল চিন্তা মনে একটিভ হতে পারে না। আমরা অনেকেই নিজেদের যৌবনকালের কিছু মুহূর্ত নিয়ে ভাবলে হয়তো এর প্রমাণ পেয়ে যাব। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাহেশাতের ফেতনায় আক্রান্ত মন সম্বন্ধে এমনই বলেছেন-
لا يعرف معروفا ولا ينكر منكرا إلا ما أشرب من هواه. (رواه مسلم في صحيحه)
অর্থাৎ, সে ধরনের মন ভাল মন্দ কোনকিছুই উপলব্ধি করতে পারে না তাতে যে খাহেশাত সিঞ্চিত হয়েছে তা ছাড়া। (সহীহ মুসলিম: হাদীছ নং ১৪৪)
মনে খাহেশাত বা প্রবৃত্তির চেতনা প্রবল থাকলে সে মন যে সঠিক জিনিসটি উপলব্ধি করতে পারে না, সে মন থেকে যে সঠিক সিদ্ধান্ত বের হয় না তার বর্ণনা কুরআনে কারীমেও রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ .
অর্থাৎ, তুমি মানুষের মাঝে সঠিক ফয়সালা করো। প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা সেটা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে (তথা সঠিক পথ থেকে) বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা ছোয়াদ: ২৬)
অতএব বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিবেদন পর্দা (হিজাব) প্রভৃতি বিধানে নারীদের সতীত্ব সুরক্ষা ইত্যাদি যেসব উপযোগিতা রয়েছে তার ভিত্তিতে এ বিধানাবলি প্রয়োজনীয় কি না তা বিবেচনা করে দেখুন মাথায় কোনরূপ যৌন চেতনার চাপ না রেখে। এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলার বা চিন্তা করার সময় ভেবে দেখবেন মনে কোনরূপ যৌনচেতনা কার্যকর রয়েছে কি না। পর্দা (হিজাব) প্রভৃতি বিধানে নারীদের সতীত্ব সুরক্ষাসহ অন্য আরও যেসব উপযোগিতা রয়েছে এবং পর্দার বিধান লংঘন করলে কী কী ক্ষতি তার বর্ণনা সামনে 5 ও 6 নং পর্বে আসছে ইনশাআল্লাহ।
একথাও মনে রেখে নিতে হবে যে, মুখে নারী প্রগতি, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি আকর্ষণীয় কথা বলা হল আর মাথায় থাকল যৌন চেতনার চাপ তথা এসব আকর্ষণীয় কথা বলে নারীদেরকে পর্দার বাইরে এনে অবাধ যৌনাচারিতার পথকে সুগম করার প্রবল ইচ্ছা, কিন্তু মনের সে আসল কথাটা স্বীকার করা হল না, তাহলে সেটা মানুষের জানার বাইরে থাকলেও আল্লাহর জানার বাইরে থাকবে না। আল্লাহ অন্তর্যামী। তাঁর কাছ থেকে কোনোকিছু লুকানো সম্ভব নয়। মনের চোর সম্বন্ধে কেউ অবগত হতে না পারলেও আল্লাহ অবশ্যই সে সম্বন্ধে অবগত। মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু লুকানো যায় কিন্তু আল্লাহ থেকে কোনোকিছুই লুকানো যায় না। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
أَوَلَا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ.
অর্থাৎ, তারা কি জানে না যে, আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন যা তারা গোপন করে এবং যা তারা প্রকাশ করে। (সূরা বাকারা: ৭৭)
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُور.
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরের বিষয় সম্বন্ধে (ও) সম্যক অবগত। (সূরা হূদ: ৫ )
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
قُلْ إِن تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ
অর্থাৎ, হে নবী! তুমি বলে দাও, তোমাদের মনে যা রয়েছে তোমরা তা গোপন রাখলে বা প্রকাশ করলে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহ তা জানেন। তিনি আকাশমণ্ডলীতে যা আছে এবং পৃথিবীতে যা আছে (সবকিছু সম্বন্ধে) অবগত আছেন। (সূরা আলে ইমরান: ২৯)
সারকথা- বুদ্ধিজীবীদের কাছে নিবেদন- আপনারা নারীদের পর্দা তথা হিজাবের বিধান, পরপুরুষের সাথে নারীদের অবাধ মেলামেশা না করার বিধান, নারীদের স্বামী-বশীভূত হয়ে থাকার বিধান- এই বিধানাবলির উপযোগিতা নিয়ে বিবেচনা করে দেখুন মাথায় কোনরূপ যৌন চেতনার চাপ না রেখে।