You are currently viewing উজবেকিস্তানে কয়েক দিন (১)

উজবেকিস্তানে কয়েক দিন (১)

মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

বিগত ৪/৮/২৪ তারিখে উজবেকিস্তান সফর থেকে ফিরে এলাম। এটি ছিল শিক্ষা সফর। দশ দিনের সফর। ভাবছি ছোট্ট করে হলেও এই সফরনামাটি লিপিবদ্ধ করে নেই। যাতে উজবেকিস্তান শিক্ষা সফরে গমনকারীদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও একটা গাইড হতে পারে। সেই সঙ্গে উজবেকিস্তানের ইতিহাস ঐতিহ্য ও ভৌগোলিক তথ্যাদি জানতে আগ্রহীদের জন্যও একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যসমাহার হয়ে দাঁড়ায়।

আসলে যেকোনো দেশ বা স্থানে শিক্ষা সফরে যেতে চাইলে সেখানে কোন্ কোন্ স্থান বা কি কি জিনিস পরিদর্শন করার রয়েছে এবং সেগুলোর ইতিহাস ঐতিহ্য কি সে সম্বন্ধে কিছুটা হলেও পূর্ব ধারণা থাকতে হয়। দর্শনীয় স্থান ও বিষয়গুলোর তালিকা করে নিয়ে যেতে হয়। নইলে অনেক কিছুই পরিদর্শনের বাইরে থেকে যেতে পারে, কারণ এমনও হতে পারে যে, গাইডরা সংক্ষেপে সেরে দিতে চাইল। আবার যেগুলোর পরিদর্শন হয়, সেই পরিদর্শনও হয় আবেগশূন্য, কৌতুহলশূন্য, পূর্ণাঙ্গ অর্জনশূন্য। পূর্ব ধারণা ও পূর্বেপ্রস্তুত তালিকা থাকলে কোনোকিছু দেখা যেমন বাদ পড়ে না, তেমনি কৌতুহলী মন অনেক কিছুই খুঁটে খুঁটে দেখার ও বুঝার চেষ্টা করে, সংশ্লিষ্ট ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে পারে। সফর হয় প্রাণবন্ত, জ্ঞানসমৃদ্ধ ও অর্থবহ।

উজবেকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে খুঁজেছিলাম কারও লেখা উজবেকিস্তানের কোন সফরনামা পাওয়া যায় কি না। কিন্তু পাইনি। হয়তো রয়েছে, যা আমি জানতে পারিনি। নেটে উজবেকিস্তান ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু ব্লগ ও ভিডিও দেখেছিলাম, কিন্তু সেগুলো সবই জেনারেল শিক্ষিতদের ব্লগ ভিডিও। ফলে সেগুলোতে ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির তথ্যাবলি বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত। তাদের ব্লগ ভিডিওগুলোতে আছে কীভাবে ভিসা করতে হবে, কোন্ এয়ারলাইন্সের টিকিট সাশ্রয়ী, কোথায় কোন্ হোটেলে থাকা যায়, কোন্ ধরনের রেস্টুরেন্টে কি কি খাবার পাওয়া যায়, কোন্ কোন্ মার্কেটে বাজার সদাই করা যায়, কীভাবে গাড়ি ভাড়া করতে হবে, কোন্ কোন্ পার্ক মিউজিয়ামে কি কি দেখা যায় ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা। এগুলো একেবারে অপ্রাসঙ্গিক তা বলছি না। তবে মূল যে বিষয় জানার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তা হচ্ছে উজবেকিস্তানে বিদ্যমান ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থান ও জিনিসগুলোর পরিচয়-পরিচিতি। কেননা উজবেকিস্তান হচ্ছে ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যেরই এক প্রাণকেন্দ্র। উজবেকিস্তান ভ্রমণের মূল আকর্ষণও এখানেই।

সফরে সফরসঙ্গী নির্বাচনের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সফরসঙ্গী হওয়া চাই সফরবান্ধব। সফরবান্ধব সঙ্গী বলে বোঝানো হচ্ছে যাদের মধ্যে সঙ্গীদের সহযোগিতার মানসিকতা আছে, সঙ্গীদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখার স্বভাব আছে, নিজের চেয়ে সঙ্গীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মত উদারতা আছে। আমার সফরসঙ্গী ছিলেন সেন্ট্রাল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস-এর স্বত্বাধিকারী, মেফতাহুল উলূম মাদরাসা ও এতীমখানা, গাজীপুর-এর মুহতামিম, জমিয়ত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী ও জামেয়া নেজামিয়া আরাবিয়া গোয়ালন্দ, রাজবাড়ি-এর মুহতামিম মাওলানা আমীনুল ইসলাম। আল-হামদু লিল্লাহ তারা উভয়েই সফরবান্ধব ব্যক্তি।

সফরসঙ্গী তিনজন বা ছয়জন- এরকম হলে সফরে প্রাইভেটকার জাতীয় গাড়ি যথাক্রমে একটা বা দু’টো ভাড়া করা যায়। ব্যয়সাশ্রয় হয়। আমরা সফরে তিন জন থাকায় এরূপ আনুকূল্য ছিল।

সফরে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সফরে সব জায়গায় ঘোরাতে এবং বোঝাতে পারে এমন একজন স্থানীয় গাইড থাকা। আপনি যার ভাষা বুঝবেন এমন একজন গাইড। উজবেকিস্তানে পেশাদার গাইড পাওয়া যায়, তবে তারা বিদেশীদের ইংরেজি ভাষাতেই বোঝায়। তাও আবার গড়গড়ে ইংরেজি। মানে কোথায় কি বলতে হবে তা বলতে বলতে তাদের এমন মুখস্থ যে, গড়গড় করে বলে যায়। খুব ভালো ইংরেজি জানা না থাকলে তাদের বয়ান ভাষণ বুঝে ওঠা কঠিন হয়। আমাদের সফরে সুবিধে ছিল- অধিকাংশ স্থানেই আমাদের গাইড ছিলেন স্থানীয় উলামায়ে কেরাম। উজবেকিস্তানে একজন প্রসিদ্ধ আলেম আছেন মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেব। গোটা উজবেকিস্তানে ছড়িয়ে আছে তার ছাত্র ও ভক্তবৃন্দ। তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের ফারেগ। হযরত সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুম-এর মুরীদ। তাশখন্দের অধিবাসী। উজবেক ভাষায় লেখা তার বেশ কিছু বইও রয়েছে। তিনি তাশখন্দের ‘সাদেক একাডেমী’-র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।  সাদেক নামক উজবেকিস্তানের একজন প্রসিদ্ধ লেখক ও মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেম ছিলেন মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের উস্তাদ। তার নামেই একাডেমির নামকরণ। এই মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের সঙ্গে আমাদের সফরসঙ্গী মাওলানা মতিউর রহমান সাহেবের পরিচয় ও বন্ধুত্ব রয়েছে। এই সুবাদেই মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেব উজবেকিস্তানের গোটা সফরে আমাদের জন্য তার ছাত্র বা ভক্তদের মধ্য থেকে বিভিন্ন স্থানের জন্য বিভিন্নজনকে গাইড হিসেবে আমাদের সঙ্গে নিযুক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন জামেয়া আজহারের ছাত্রও ছিল। তারা প্রায় সকলেই ভালো আরবি বলতে সক্ষম। আরবিতেই তারা আমাদের সবকিছু বুঝিয়েছেন। একমাত্র তাশখন্দে ঘোরানোর জন্য বেশিরভাগ সময় আমাদের সঙ্গে থাকতেন মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি। তার নাম বেহযাদ। তিনি আরবিতে নয় ইংরেজিতেই সবকিছু বলতেন। কিছুটা ইংরেজি জানা থাকায় সেটাও আমরা চালিয়ে নিয়েছি।

Leave a Reply