লেখক : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد :
কুরআনের ন্যায় হাদীছও ইসলামী বিধি-বিধানের উৎস। ঈমান আকায়েদ, মাসায়েল, ফাযায়েল সবকিছুই হাদীছ দ্বারাও প্রমাণিত হয়, যেমন এগুলো কুরআন দ্বারা প্রমাণিত হয়। তবে কোন কিছু প্রমাণ করার জন্য হাদীছ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য তথা আমলযোগ্য হতে হবে। গ্রহণযোগ্য হাদীছ বলতে শুধু সহীহ স্তরের হাদীছই উদ্দেশ্য নয়, বরং সহীহ স্তরের হাদীছ, হাছান স্তরের হাদীছ এবং ফাযায়েলের ক্ষেত্র হলে খুব বেশি জয়ীফ নয় এমন হালকা জয়ীফ হাদীছও গ্রহণযোগ্য স্তরের অন্তর্ভুক্ত। জুমহূরের মতে ফাযায়েল অধ্যায়ে হালকা জয়ীফ হাদীছও গ্রহণযোগ্য তথা আমলযোগ্য। অতএব বিধি-বিধান, মাসায়েল ফাযায়েল সবক্ষেত্রে যেটা যাচাই করা দরকার তা হল হাদীছ আমলযোগ্য কি না।
অনেক সাধারণ মানুষ এই ভুল ধারণার শিকার যে, সব ক্ষেত্রেই হাদীছ সহীহ হওয়া শর্ত। তারা সহীহ বলতে কী বুঝায় তাও সঠিকভাবে জানে না। তারা মনে করে যে হাদীছ সহীহ নয় তা সব জাল, তা সব অগ্রহণযোগ্য। বস্তুত ব্যাপারটা সে রকম নয়। সহীহ একটা পরিভাষা। পরিভাষা অনুসারে সহীহ-এর বাইরে হাছান স্তরের হাদীছ রয়েছে, যেগুলো গ্রহণযোগ্য। সেগুলো জাল বা অগ্রহণযোগ্য নয়। এমনিভাবে হাদীছ জয়ীফ হলেও একবাক্যে তা অগ্রহণযোগ্য- এমন নয়। বরং হালকা জয়ীফ হলে ফাযায়েল অধ্যায়ে তা গ্রহণযোগ্য। এমনকি কোন কোন ইমামের মতে জয়ীফ হালকা হলে তা দ্বারা আকায়েদ বিষয়েও দলীল দেয়া চলে।
সাধারণ মানুষ হাদীছের এসব পরিভাষা সম্বন্ধে অবগত নয়। কোন্ ধরনের বিষয়ে কোন্ স্তরের হাদীছ জরুরী বা জরুরী নয় তা-ও তারা জানে না। তাই সাধারণ মানুষ একটা হাদীছ শুনলেই যে প্রশ্ন করে হাদীছটি সহীহ কি না- এভাবে প্রশ্ন না করে তাদের প্রশ্ন করা উচিত এভাবে- হাদীছটি আমলযোগ্য কি না।
সাধারণ মানুষের সামনে কোন আমল প্রসঙ্গে হাদীছ পেশ করা হলে যদি তারা প্রশ্ন করে হুজুর! হাদীছটি সহীহ কি না, তাহলে কি তাদেরকে এটা বুঝানো সম্ভব যে, সহীহ নয় তবে হাছান আর হাছান হাদীছও গ্রহণযোগ্য। সাধারণ মানুষ সহীহ হাছান- এসব পরিভাষার পার্থক্য কী বুঝবে? তাছাড়া তারা তো সহীহ নয় শুনলেই বুঝে বসবে তাহলে এটা জাল। এমনিভাবে সাধারণ মানুষের সামনে এই শ্রেণী-বিভাজন তুলে ধরাও ঠিক হবে না যে, হাদীছটি জয়ীফ হলেও খুব বেশি জয়ীফ নয়, ফাযায়েল অধ্যায়ে এটা গ্রহণযোগ্য। কেননা তারা জয়ীফ নাম শুনলেই ভাববে জয়ীফ আবার গ্রহণযোগ্য হয় কীকরে! তারা তো জয়ীফ মানেই মওজূ’ তথা জাল বুঝে বসে আছে। অতএব সাধারণ মানুষের সামনে কোন আমল প্রসঙ্গে কোন হাদীছ পেশ করা হলে যদি তারা প্রশ্ন করে হুজুর! হাদীছটি সহীহ কি না, তাহলে উলামায়ে কেরামের উচিত হবে তাদেরকে বলা যে, এভাবে প্রশ্ন করুন- হাদীছটি আমলযোগ্য কি না। বিশেষ ধরনের ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বলা যেতে পারে যে, হাদীছ তো অনেক প্রকারের রয়েছে। সহীহ, হাছান, জয়ীফ শাদীদ, জয়ীফ গায়র শাদীদ- এরকম বহু প্রকারের রয়েছে। এসব পরিভাষার পার্থক্য আপনাদের জানা নেই। কোন প্রকারের হাদীছ কোন ক্ষেত্রে আমলযোগ্য বা আমলযোগ্য না- সেই বিশদ বিবরণও আপনাদের জানা নেই। সেই বিশদ বিবরণ আপনাদের জানার প্রয়োজনও নেই। আপনাদের এতটুকু জানলেই যথেষ্ট যে, এই ক্ষেত্রে হাদীছটি আমলযোগ্য কি না। তাই হাদীছটি সহীহ কি না- এভাবে প্রশ্ন না করে এভাবে প্রশ্ন করুন- হাদীছটি আমলযোগ্য কি না।
হাদীছটি সহীহ কি না- সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নের বেলায় উলামায়ে কেরাম উপরোক্ত নীতি গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে না। বস্তুত সাধারণ মানুষ যে ইদানিং প্রশ্ন করে হাদীছটি সহীহ কি না, এর পেছনে কিছু বিভ্রান্তিমূলক চেতনাও কাজ করে, যে চেতনাগুলো কিছু লোক সৃষ্টি করে দিয়েছে, যা অনেকেই অবগত আছেন। সেই বিভ্রান্তিমূলক চেতনার মধ্যে বিশেষ দু’টো চেতনা হল- এক. তারা সহীহ-এর বাইরে হাছান ও জয়ীফ গায়র শাদীদকে কোন ক্ষেত্রেই দলীলযোগ্য মনে করে না। এটা একটা বিভ্রান্তি। দুই. সহীহ-এর বাইরে সবটাকে তারা জাল তথা মওজু মনে করে। এটাও এক বিভ্রান্তি।
আল্লাহ সকলকে সীরাতে মুস্তাকীমে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!