লেখক : মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد :
ইদানিং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উলামায়ে কেরামের হাতে একটি রাষ্ট্র আসায় নারীবাদীরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। তারা তাদের পুরণো সব বুলি- নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার ইত্যাদির কী হবে এসব নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে আরম্ভ করেছে। তারা সব সময়ই এ কথাগুলো বলে পৃথিবীর মানুষকে বুঝাতে এবং গেলাতে চেষ্টা করে যে, তারা নারীদের জন্য অনেক কিছু করে, ইসলাম যেগুলো ছিনিয়ে নেয়। তাহলে একটু পর্যালোচনা করে দেখতে হয় তারা নারীদেরকে কি দেয় এবং ইসলাম নারীদেরকে কি দেয়।
ইসলাম নারীজাতিকে কি দিয়েছে আর নারীবাদীরা নারীজাতিকে কি দিতে চায় বিষয়টা নিয়ে একটু তুলনামূলক আলোচনা পেশ করতে চাই ।
তাহলে শুনুন- নারীবাদীরা নারীদেরকে যা দিয়েছে বা যা দিতে চায় তার সারকথা হল- তারা নারীদেরকে অবাধ ভোগের পণ্য বানাতে চায়। তারা নারীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা যত কিছু নিয়ে হৈচৈ করে, সোচ্চার হয়, মাথা ব্যাথা দেখায় সেই সবকিছুর পেছনে -মুখে না বললেও- তাদের মতলব থাকে নারীদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসা, তাদেরকে অবাধে ভোগ করতে পারার পরিবেশ তৈরি করা। তাদের মতলব যে এমনই তার প্রমাণ স্বরূপ নিম্নে কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করছি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী তাও খোলাসা করছি।
★ নারীবাদীরা নারীদেরকে অবাধ ভোগের পণ্য হিসেবে পেতে চায়। তারা নারীদের চাকরি পাওয়ার অধিকার বিষয়ে যা কিছু বলে তার পশ্চাতে নারীদেরকে অবাধ ভোগের পণ্য হিসেবে পাওয়ার চিন্তাই প্রচ্ছন্ন থাকে। এ কারণে কোন প্রতিষ্ঠানে নারীকর্মীদের বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা ভাল দেয়া হলেও যদি সে প্রতিষ্ঠান নারীদেরকে কেবল হেজাব পরে আসতে এবং পুরষকর্মীদের সাথে অবাধে মেলামেশা না করতে বলে, তাহলে নারীবাদীরা তা মেনে নিতে পারেন না। কারণ তাতে নারীবাদীদের আসল মতলবে আঘাত আসে। আইল ঠেলে পয়মালি করার সুযোগ ব্যাহত হয়। যদি নারীদের চাকরি এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধাই তাদের মূল লক্ষ্য হত তাহলে তা তো দেয়া হচ্ছে, তবে কেন হেজাবের কথায় তারা নাখোশ হন, তবে কেন অবাধে মেলামেশা না করার নির্দেশে তারা নারাজ হন। দেখা গেল নারীবাদীরা চাকরি পাওয়া, নারীর অধিকার- এইসব অধিকারের নামে নারীসমাজের ভরণ-পোষণের ভার নারীদেরই উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এই সুবাদে তাদের সতীত্বকে ঝুকিতে ফেলে দিচ্ছে।
এর বিপরীত ইসলাম নারীদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব দিয়েছে তাদের বিবাহের আগ পর্যন্ত পিতাদের উপর এবং বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীদের উপর। স্বামীর মৃৃত্যুর পর এ দায়িত্ব বর্তাবে সন্তানাদির উপর। জীবিকার জন্য নারীদেরকে কখনও ঘরের বাইরে যেতে হবে না। ঘরে থেকেই তারা জীবিকা পাবে। ঘরের বাইরে গিয়ে তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ সতীত্বকে ঝুকিতে ফেলতে হবে না। ইসলাম নারীর সতীত্বকে দামী সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে। ইসলাম কোমল স্বভাব নারীদেরকে জীবিকা উপার্জনের জন্য তাদের সহজাত প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে বাইরে ছোটাছুটি করা বা গায়ে গতরে খেটে খাওয়ার চাপ দেয়নি। বরং তারা ঘরে থেকেই যেন নির্ঝঞ্ঝাট জীবিকা পেয়ে যায় তার বিধান রেখেছে।
★ নারীবাদীরা নারীদের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার বিষয়ে যা কিছু বলে তার পশ্চাতেও নারীদেরকে অবাধ ভোগের পণ্য হিসেবে পাওয়ার চিন্তাই প্রচ্ছন্ন থাকে। এ কারণে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের ভাল শিক্ষা-দীক্ষা দেয়া হলেও যদি সে প্রতিষ্ঠান মেয়েদেরকে কেবল হেজাব পরে আসতে বলে, তাহলে নারীবাদীরা তা মেনে নিতে পারেন না। একই কারণে সহশিক্ষার বিরুদ্ধে কোন কথাও তাদের মনপুত হয় না। কারণ তাতে নারীবাদীদের আসল মতলবে আঘাত আসে। চোখের সুড়সুড়ানি নিবৃত্ত করার সুযোগ থাকে না, অবাধ যৌনাচারিতার পথ নিষ্কণ্টক থাকে না। যদি নারীদের শিক্ষার সুযোগই তাদের মূল লক্ষ্য হত তাহলে তা তো দেয়া হচ্ছে, তবে কেন হেজাবের কথায় তারা নাখোশ হন, তবে কেন নারী পুরুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিন্ন করার কথায় তারা নারাজ হন। দেখা গেল নারীবাদীরা নারীদের শিক্ষার ধোঁয়া তুলে তাদের অমূল্য সম্পদ সতীত্বকে হরণ করে নিতে চাইছে। তাদের সতীত্বের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে তৎপর থাকছে। বলা বাহুল্য- হেজাব ও পর্দা ব্যবস্থাই হল নারীর সতীত্ব সুরক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা।
এর বিপরীত ইসলাম নারীদের শিক্ষাকেও সমর্থন করছে আবার হেজাব ও পর্দার বিধান রক্ষার তাগিদ দিয়ে তাদের অমূল্য সম্পদ সতীত্বের সুরক্ষাও দিতে চাইছে। ইসলাম ব্যালেন্সহারা বিধান প্রবর্তন করেনি।
★ নারীবাদীদের কাছে নারী শুধুই ভোগ্যপণ্য হিসেবে মূল্যায়িত হয়। তাই যে নারীরা ভোগ্যপণ্য হিসেবে যুৎসই না তাদের কোন ব্যাপারে নারীবাদীদের ঔৎসুক্য দেখা যায় না। এ কারণেই বৃদ্ধা নারীদের ওল্ড হোমে পাঠানো হলে সে ব্যাপারে তাদেরকে নির্লিপ্ত দেখা যায়। রূপ-লাবন্যহীন, রোদে পোড়া ও জীবিকার তাগিদে দিন মজুরি খেটে খাওয়া নারীদের ব্যাপারেও তাদেরকে নির্লিপ্ত দেখা যায়।
এর বিপরীত ইসলামে পিতার অবর্তমানে মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সন্তানের উপর বর্তানো হয়েছে। মায়ের খেদমত করাকে সন্তানের উপর ফরয করা হয়েছে। এমনকি মায়ের খেদমতকে জান্নাত লাভের উপায় বলে দেয়া হয়েছে। নাসাঈ শরীফের হাদীছে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবীকে মায়ের খেদমতে থাকার নির্দেশ দেওয়ার পর বলেছিলেন,
“فإن الجنة تحت رجليها”.
অর্থাৎ, কেননা মায়ের দুই পাযের তলেই জান্নাত। (নাসাঈ: হাদীস নং ৩১৪০) এ হাদীছে এক দিকে মাতৃজাতির মর্যাদাকে সমুন্নত করে দেখানো হয়েছে, অন্যদিকে সন্তানাদিকে মায়ের খেদমত করে তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর বলা বাহুল্য এমন চেতনায় গড়ে ওঠা সন্তান কখনও তার মাকে বৃদ্ধ বয়সে ওল্ড হোমে পাঠাতে পারে না।
★ নারীবাদীরা নারীদেরকে শুধু ভোগের পণ্য হিসেবেই মূল্যায়ন করে থাকে। তাই যেকোনোভাবে ভোগ অনুষঙ্গে নারীকে ব্যবহার করা হলে -তা যত কদর্য আকারেই ব্যবহার করা হোক না কেন- নারীবাদীরা তা সমর্থন করে থাকে। এজন্যই বেশ্যাখানায় নারীদের ব্যবহারকে তারা সমর্থন করে। এটাকে তারা অসামাজিক কাজ হিসেবে গণ্য করে না। যদিও ঐ নারীরা সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে অমানবিক জীবন যাপনই করে থাকে। একই কারণে যেনা ধর্ষণকে তারা মৌন সমর্থন দিয়ে যায়। এমনকি পৈশাচিকভাবে ধর্ষণ নিয়ে সেঞ্চুরি পালন করা হলেও তারা সমর্থনসূচক নীরবতা পালন করে যায়। চাকরিজীবি নারী যখন তার চাকরি রক্ষার জন্য বসদের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নারীকর্মীকে যখন পার্টির মনোরঞ্জনে পাঠানো হয়, তখনও নারীবাদীরা চুপ থাকে। নারীজাতিকে তারা যৌনদাসীতে পরিণত করেছে, যার যেভাবে মনে চায় ব্যবহার করবে, যার কাছে মনে চায় পাঠিয়ে দিবে। বস্তুত নারীবাদীদের কাছে নারীর সতীত্ব কোনোই মূল্য রাখে না। তাদের দৃষ্টিতে নারী ভোগের উপকরণ মাত্র। তাদের দৃষ্টিতে নারীকে যৌন দাসীতে পরিণত করা কোন অপরাধ নয়।
এর বিপরীত ইসলাম নারীর সতীত্বকে অনেক অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে। এই সম্পদ হরণকারী তথা যেনাকারী ও ধর্ষণকারীর জন্য ইসলাম কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। নারীর সতীত্ব হরণ তো দূরের কথা যে পুরুষ কোন নারীর মাহরাম নয় সেই পুরুষ সেই নারীর দিকে দৃষ্টি ফেলবে তাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে ঐই নারীর সতীত্ব হরণের চিন্তাও তার মনে বাসা বাঁধতে না পারে।
★ নারীবাদীরা নারীদেরকে শুধু ভোগের পণ্য হিসেবেই মূল্যায়ন করে থাকে। তাই নারীদের যতদিন রূপ-লাবণ্য থাকে ততদিন তাদেরকে মূল্যায়ন করে, রূপ-লাবণ্য ফুরিয়ে যাওয়ার পর নারীদের কোন মূল্য তাদের কাছে থাকে না। তাই দেখা যায় রূপ-যৌবন থাকাকালীন যে সুন্দরীদের পেছনে যে নায়িকাদের পেছনে তারা ঘুরঘুর করে, রূপ-যৌবন ফুরিয়ে যাওয়ার পর সেই সুন্দরীরাই সেই নায়িকারাই যখন রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়ায়, সেই ঘুরঘুরকারীরা তাদের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না। এটা কল্পিত কথা নয় বাস্তবতার বর্ণনা।
★ নারীবাদীদের মতলব থাকে যতকিছুই হোক নারীদেরকে ভোগ করতে হবে। এ মতলব সিদ্ধি করতে হলে নারীদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসতে হবে। তাদের নিয়ে ছুটছুট খেলতে হবে- তাদেরকে নিয়ে ক্লাবে যেতে হবে, ট্যুরে যেতে হবে, হোটেলে রাত্র যাপন করতে হবে। এসব করার ফলে ঐ নারীদের স্বামীদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে বাঁধুক, এর ফলে তাদের দাম্পত্যকলহ দেখা দেয় দিক, তাদের দাম্পত্যজীবন অশান্তিময় হয়ে ওঠে উঠুক, তাদের সংসারে আগুন লাগে লাগুক, সমাজে ঐ নারীদের কলঙ্ক রটে রটুক, যা কিছুই হয় হোক নারীবাদীদের সেগুলো দেখার বিষয় নয়। তাদের এক চিন্তা এক ধ্যান- যতকিছুই হোক মতলব সিদ্ধি করা চাই। দেখা গেল নারীবাদীরা নারীদেরকে দাম্পত্য কলহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, দাম্পত্য জীবনের অশান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের সংসারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তাদের জীবনকে কলঙ্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এর বিপরীত ইসলামী বিধানে নারী পুরুষ উভয়ে যেন পরস্পর সন্দেহমুক্ত থাকতে পারে, তাদের দাম্পত্য জীবনে যেন কলহ অশান্তি দেখা দিতে না পারে, তাদের সংসারে যেন আগুন লাগতে না পারে, তাদের সংসার যেন উচ্ছন্নে না যায় এ উদ্দেশ্যে পর্দা ও সতীত্ব রক্ষার মত এমন বিধান রাখা হয়েছে যা দাম্পত্য কলহ অশান্তি ইত্যাদি অনুপ্রবেশের চোরা গলিকেই রুদ্ধ করে দেয়।
★ নারীবাদীরা নারীদেরকে বাণিজ্যিক উপকরণে পরিণত করেছে। খাদ্য-খাবার থেকে শুরু করে তেল সাবান আলকাতরা পর্যন্ত সবকিছুর বিজ্ঞাপনে শ্রদ্ধেয় মা বোনকে তারা ব্যবহার করছে। কিন্তু ইসলাম নারী জাতিকে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে মূল্যায়ন করে। এই নারীদের গর্ভে নবীদের জন্ম হয়েছে, এই নারীদের গর্ভে অলি-আল্লাহদের জন্ম হয়েছে, এই নারীদের গর্ভে বুজুর্গানে দ্বীন ও মনীষীদের জন্ম হয়েছে। এই নারী জাতি আপনার আমার সকলের জন্মদাত্রী। তারা মাতৃত্বের আসনে সমাসীন। এই নারী জাতি সম্মানের পাত্র, তাদেরকে বাণিজ্যিক উপকরণে পরিণত করা যেতে পারে না।
★ নারীবাদীরা যখন নারীদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বামীরা নারীর সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ দিনের শেষে কর্মক্লান্ত হয়ে ফিরে আসা কর্মজীবি নারীর পক্ষে স্বামীর সেবায় মনযোগ দেয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। আর স্বামী সেবার অনুপস্থিতি তাদের দাম্পত্য জীবনের ঘনিষ্টতাকে বিনষ্ট করছে, তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে। কর্মস্থলে ছুটে যাওয়া নারীর ছোট ছোট সন্তানরা মায়ের স্নেহ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্য ঘটাচ্ছে। মায়ের অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় ছোট সন্তানরা দাসীদের দ্বারা লালিত-পালিত হওয়ায় ঐ সন্তানদের মন-মানসিকতা নীচ হয়ে গড়ে উঠছে। এই নীচু মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্যযুক্ত শিশুরাই দেশ ও সমাজের কর্ণধার হচ্ছে। ফলে দেশ ও সমাজও এই নীচুতা ও বৈকল্যের প্রভাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না, পাওয়ার কথা নয়। এভাবে ব্যাক্তির সাথে সাথে দেশ ও সমাজেরও অকল্যাণ ঘটছে। এভাবে নারীবাদীরা মানুষের পবিত্র দাম্পত্য সুখ বিনষ্ট করছে, শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্য ঘটাচ্ছে, শিশুদের নীচ মন-মানসিকতা সৃষ্টির সূচনা ঘটাচ্ছে। সর্বোপরি দেশ ও সমাজের অকল্যাণ ঘটাচ্ছে।
এর বিপরীত ইসলাম নারীদের কর্মাঙ্গন রেখেছে ঘরকে। একান্ত অপারগতায় নারী চাকরিও করতে পারবে, বহিরাঙ্গনেও যেতে পারবে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে পর্দা ও শালীনতা রক্ষা সাপেক্ষে। ইসলামী বিধান মোতাবেক নারী যখন গৃহকেই তার কর্মস্থল রাখবে, তখন স্বামী সেবা, দাম্পত্যসুখ, ছেলেমেয়ের আদর-সোহাগ, তাদের মন-মানসিকতা গঠন, তাদের লালন-পালন কোনকিছুতেই বিরূপ কিছু ঘটবে না।
★ সর্বশেষ একটা বিষয় রয়ে গেল। তা হচ্ছে নারীদের স্বাধীনতার বিষয়। তো নারীবাদীরা এই “নারী স্বাধীনতা” বলে নারীর কোন বিষয়ে স্বাধীনতা বোঝাতে চায় তা-ই স্পষ্ট নয়। নারীকে শিক্ষা গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হল, চাইলে সে উচ্চ শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারবে। তাকে ভরণ-পোষণের প্রয়োজনে চাকরি করার স্বাধীনতাও দেয়া হল। পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে তার মতামত প্রদানের স্বাধীনতাও রয়েছে। তাহলে আর কোন বিষয়ে স্বাধীনতা বাকি রইল? হ্যাঁ একটা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বাকি রইল। সেটা হচ্ছে পর পুরুষের সাথে অবাধে চলাফেরা ও অবাধ যৌনাচারিতার স্বাধীনতা। ইসলাম এ স্বাধীনতা দেয়নি। সব স্বাধীনতাই নারীকে দেয়া হয়েছে, কেবল এই স্বাধীনতাই দেয়া হয়নি। তবে কি নারীবাদীরা নারী স্বাধীনতা বলে এই স্বাধীনতাকেই বোঝাতে চায়? তাহলে কথা ভিতরে না রেখে স্পষ্টই বলুক আমরা নারীদের জন্য পর পুরুষের সাথে অবাধে চলাফেরা ও অবাধ যৌনাচারিতার স্বাধীনতা চাই।
যাহোক কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করলাম যাতে স্পষ্ট হয়ে থাকবে যে, নারীবাদীরা তাদের আচরিত নীতি ও কর্ম দ্বারা নারী সমাজকে এই বার্তা দিয়েছে, দিয়ে যাচ্ছে যে, হে নারী সমাজ! আমাদের কাছে তোমাদের কদর শুধু ভোগের পণ্য হিসেবে। ভোগের জন্য যেভাবে আমাদের মনে চায় তোমাদেরকে ব্যবহার করব। ভোগশেষে তোমাদেরকে কলার ছোবড়ার ন্যায় ছুড়ে মারা হবে। আমাদের ইচ্ছেমত তোমাদেরকে ভোগ করার ফলে পরিবার দেশ ও সমাজের যতকিছুই ক্ষতি হোক তা আমাদের মোটেই বিবেচ্য নয়। কিন্তু নারীবাদীদের বাহ্যিক মোহনীয় শ্লোগানে মোহিত নারী সমাজ মোহের ঘোরে নারীবাদীদের এই বার্তা বুঝে উঠতে পারে না। অবশেষে সবকিছু হারানোর পর যখন তাদের সম্বিত ফিরে আসে তখন তাদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর সময় থাকে না।
এ-ই হল নারীবাদীরা নারীসমাজকে কী দিয়েছে, কী দিতে চায় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। পাশাপাশি ইসলাম নারীসমাজকে কী দিয়েছে, কী দিতে চায় তারও বিবরণ। এখন উভয় বিবরণ সামনে রেখে নারী সমাজকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোনটা গ্রহণ করবে। দেশ ও জাতির কল্যাণকামীদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোনটা গ্রহণ করবে।