بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد
ইসলামের শুরু থেকে অদ্যাবধি হক ও হক্কানিয়াতের ধারায় ইসলামের ফাহম ও ইফহাম তাফহীম (ইসলাম বুঝা ও বুঝানো) যেসব বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত হয়ে চলে আসছে তার মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে- (1) আহলে হকের ধারার উপর বহাল থেকে (তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে) কুরআন হাদীছের তরজমানী করা। (2) ছোটদের চেয়ে বড়দের বুঝকে প্রাধান্য দেয়া। (3) ই’তিদাল তথা ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। (4) নুসূস নির্ভর রুসূখে তথা নুসূস নির্ভর পরিপক্ক ও স্থিত চিন্তায় পরিচালিত হওয়া, আবেগ জযবায় পরিচালিত না হওয়া।
কিন্তু ইদানিং অনলাইনে তথা ফেসবুক প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের ফাহম ও ইফহাম তাফহীম এই চারটি বৈশিষ্ট্যকে বিনষ্ট করে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় চেনাজানা বাতিল ফিরকা তো রয়েছেই, হকপন্থী হিসেবে পরিচিত ঘরানার কিছু আলেম তালাবাও আহলে হক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, এমনকি নিজ উস্তাদদের থেকে পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে অতি জেহাদী, তাকফীরী ও উগ্র চেতনায়, ফলনা ফলনা আশ্রিত চেতনায় কুরআন হাদীছের তরজমানী করছে। এখানে বড়দের বর্জন করে ছোটদের বুঝ নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে। ইঁচড়ে পাকা পণ্ডিতদের নিয়ে মাতামাতি করা হচ্ছে। এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু আলেম তালাবা ই’তিদাল তথা ভারসাম্য হারিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এদের কেউ কেউ ভারসাম্য হারিয়ে তাকফীরী মেজাযের অনুবর্তী হয়ে উঠছে, খারিজী মেজাযের হয়ে উঠছে। যাদের প্রবণতা হল কথায় কথায় মুসলমানকে এমনকি বড় বড় মনীষীদেরকেও কাফের গোমরাহ ইত্যাদি আখ্যায়িত করা। এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু তালিবে ইলম বা ইলমে রুসূখ (স্থিতি ও পরিপক্কতা) আসেনি এমন কিছু নবীন আলেম আবেগের বশবর্তী হয়ে, বা অপরিপক্ক চিন্তা থেকে একটা জায়েয পর্যায়ের জিনিসকে সুন্নাত এমনকি ওয়াজিব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মত বাড়াবাড়ি করছে। যেমন কিছুদিন থেকে দেখা যাচ্ছে একের অধিক বিবাহকে নিয়ে তেমনই করা হচ্ছে। অবশ্যই এটা আবেগ জযবায় পরিচালিত হওয়া, ভারসাম্যহীনতা। এভাবে চলছে আরও বহু রকম ভারসাম্যহীনতা।
এভাবে চলতে থাকলে দ্বীন আহলে হক আকাবির আসলাফের ধারা থেকে তথা সহীহ ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, আবেগ নির্ভর হয়ে উঠবে, জযবা নির্ভর হয়ে উঠবে, অপরিপক্ক চিন্তা নির্ভর হয়ে উঠবে, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।
তাহলে কি এই দুশ্চিন্তা আসার সময় হয়নি যে, অনলাইনের ইসলাম অফলাইনের ইসলাম থেকে ভিন্ন রকম হয়ে যাচ্ছে! অফলাইনে যে দ্বীনে ইসলাম চলে আসছিল সিনিয়রদের প্রাধান্য নির্ভর হয়ে, অনলাইনে সেটা হয়ে যাচ্ছে জুনিয়রদের প্রাধান্য নির্ভর। অফলাইনে যে দ্বীনে ইসলাম চলে আসছিল ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায়, অনলাইনে সেটা হয়ে যাচ্ছে ভারসাম্যহীন। অফলাইনে যে দ্বীনে ইসলাম নুসূস নির্ভর পরিপক্ক ও স্থিত চিন্তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল, অনলাইনে সেটা হয়ে যাচ্ছে ইঁচড়ে পাকা পণ্ডিতদের অপরিপক্ক জ্ঞান নির্ভর, আবেগ নির্ভর, জযবা নির্ভর। এভাবে চলতে থাকলে আল্লাহ না করুন দ্বীন তার আসল রূপ হারাবে, দ্বীনে বিকৃতি আসবে।
আল্লাহ না করুন এভাবে চলতে থাকলে এক সময় অনলাইনের এই ইসলামী ধারা হয়ে দাঁড়াবে এক বিশাল ফেতনা, যে ফেতনায় জড়িত থাকবে আমাদের আহলে হকেরও অনেক না-বুঝ সন্তান।
আল্লাহ আমাদের সকলকে আগেভাগেই সচেতন হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!